২৬ নভেম্বর ২০২০, আজকের মেঘনা. কম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
বাবা খোঁজ নেন না দুই বছর। দুই বেলা ঠিকমতো দুমুঠো ভাতই জোটে না, দুধ জুটবে কিভাবে? তাই অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে ১৫ মাস বয়সী কন্যা শিশুকে দত্তক দিয়েছেন অসহায় এক মা।
নিজের কোলের শিশুকে অন্যের কাছে দত্তক দিয়ে এবং আট বছর বয়সী বড় মেয়ের ভরণপোষণ চালাতে না পেরে ওই মা এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতেও গত দুই বছরে একবারের জন্য স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ নেননি স্বামী। উল্টো ঢাকায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করছেন বলে জানান স্বজনরা। এই ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার করতোয়ারপাড় গ্রামে।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালে উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার গ্রামের আনিছুর রহমান আনিসের সঙ্গে একই উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের করতোয়ারপাড় গ্রামের গফ্ফার আলীর মেয়ে শেফালী বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের সংসারে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম নেয়। আনিছুর বিয়ের আগে থেকেই ছিলেন মাদকাসক্ত। বিয়ের পর থেকে সাংসারিক সামান্য বিষয় নিয়েই স্ত্রী শেফালীকে নির্যাতন করতেন। এরই মধ্যে তাদের ঘরে আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম হলে মাদকাসক্ত আনিছুর স্ত্রীকে জোর করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এর কিছুদিন পর দুই মেয়েকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে গেলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ে আনিছুরের। এর মাঝে পাশের আপুয়ারখাতা গ্রামে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যান তিনি। আর তখন থেকে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি আনিছ।
দুই মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনও বাড়িতে থাকতে না দিলে নিরুপায় হয়ে বৃদ্ধা মায়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন শেফালী। সেখানে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে অসুস্থ শেফালীর দিন কাটে অনাহারে অর্ধাহারে। এদিকে ১৫ মাসের কন্যা শিশু খাবারের অভাবে সারা দিন কাঁদকে থাকত। এ পরিস্থিতে বাধ্য হয়ে শিশুটিকে একই ইউনিয়নের দলবাড়ি গ্রামের নিঃসন্তান আনিছুর রহমান দম্পতির কাছে দত্তক দেন তিনি।
শেফালীর মা রমিছা খাতুন বলেন, ‘অভাবের সংসার নিজেই খাবার পাই না, বাচ্চাগুলাক কী খাওয়াই। তাই বাধ্য হয়ে ছোট নাতনিকে দত্তক দিয়েছি।’
শেফালী বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী নেশাগ্রস্ত হয়ে প্রায় সময় আমাকে সামান্য বিষয় নিয়ে নির্যাতন করত। আমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে সে গোপনের বিয়ে করেছে।’ স্বামী-সন্তানকে ফিরে পেয়ে আবারও স্বাভাবিক জীবনে আসার আকুতি জানান অসহায় শেফালী।
দলদলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান মুন্সি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে-এ-জান্নাত রুমি পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। শেফালী বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে কিভাবে তাকে সাবলম্বী করা যায় সে বিষয়টি আমরা দেখছি। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’