• বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন

করোনাকালে স্কুল থেকে ঝড়ে পরা শিক্ষার্থীর ভীড়ে গজারিয়ায় বেড়েছে শিশু শ্রম।

ওসমান গনি, গজারিয়া প্রতিনিধি / ২১৪ বার পঠিত
আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২২ জুন, ২০২১

২২ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম,

ওসমান গনি, গজারিয়া প্রতিনিধিঃ

মুন্সীগঞ্জর গজারিয়া উপজেলায় করোনার এই সংকট কালে দিন দিন বেড়েই চলেছে ঝুঁকিপূর্ন শিশু শ্রম। গজারিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা মিলছে শিশু শ্রমিক দের । তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্টিল ও কাঠের ফার্নিচারের দোকান, ভাঙ্গারীর দোকান, হোটেল রেস্তোরা, ওয়েল্ডিং এর দোকান, কসমেটিক্স দোকান, ওষুধের ফার্মেসি, ব্যাটারির দোকান, গাড়ির গ্যারেজে সহ বহুতল ইমারত নির্মাণ কাজেও দেখা যাচ্ছে এসব শিশু শ্রমিকরা নিয়োজিত রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায় গজারিয়ার ভাটেরচর এলাকায় অতিরিক্ত মুনাফার আশায় শিশু শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মদিনা ফরেন ফার্নিচার মার্ট এর কারখানায় এমন কতিপয় শিশু শ্রমিক রয়েছে যাদের বয়স প্রায় ৯ থেকে ১০ বছরের নিচে আবার কারো ১৩ কিংবা ১৪ হবে। সেখানে তাদের কাজে নেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শিশুদের দিয়ে অবাধে চলছে ক্যামিক্যাল মিক্সিং ফার্নিচার শাইনিং ও ভার্নিসিং মত ক্ষতিকারক কাজ। ক্যামিক্যাল জাতীয় এইসব ক্ষতিকারক পর্দাথ স্প্রে আকারে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে তাদের দেহে ভিতর ঢুকেছে। এতে করে তাদের রয়েছে নানা ধরনের শারীরিক ক্ষতির আশংঙ্কা।

মদিনা ফরেন ফার্নিচার কারখানার শিশু শ্রমিক দের সঙ্গে কথার বলার এক পর্যায়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিশু শ্রমিক জানায় তার বাস্তবতার কথা। সে বলেন আমার বয়স (১২)। আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। আমরা ২ ভাই ১ বোন। হত দরিদ্র বাবা মা সন্তান। তাই বাধ্য হয়ে আমি পড়ালেখা ছেড়ে ফার্নিচারের দোকানে এসব কাজ শুরু করি। বেতনের কথা জানতে চাইলে সে বলে, মাসে ৫ হাজার টাকা পাই। এটা তো শারীরিক ক্ষতিকারক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, এ কাজ কেন করো এমন প্রশ্নের উত্তরে সে জানায়, অন্যান্য কাজের চেয়ে এ কাজে টাকা বেশি পাই তাই করি এবং আমিও ভালো করে চলতে পারি ও পরিবারকে কিছু টাকা দিতে পারি। এর মতো অনেক শিশু গজারিয়ার বিভিন্ন দোকানে শিশু শ্রমের কাজ করছে। বর্তমান বিশ্বে প্রতিটি দেশ শিশু শ্রম বন্ধের ঘোষণা দিলেও আমাদের দেশে এটি প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। করোনা কালে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া শিশু মাত্রা বাড়বে বলে আংশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে দিন দিন এই শিশু শ্রমিকের সংখ্যাও বাড়বে বলে অনেকরই অভিমত। সচেতন মহল মনে করেন বাংলাদেশে শিশু শ্রমের অন্যতম কারণ হলো দারিদ্রতা। আর আমাদের দেশে ৩১ দশমিক ৬ ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এসব পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু আয় দৈনিক ৮০ টাকারও কম। এদের বেশির ভাগ পরিবার অসচ্ছল। ফলে এসব পরিবারের শিশুরা তাদের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য ছোট থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা শুরু করে। তাই তাদের নিজেদের আর পরিবারের খাওয়ার জন্য শিশুরা লেখাপড়ার পরিবর্তে এধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পিছ পা হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তাদের এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে মোটর ওয়ার্কশপে কাজ, গ্রেন্ডিং ওয়েল্ডিং, গ্যাস কারখানা, লেদ মেশিন, রিকশা চালানো, বাস-ট্রাকের হেলপারি, নির্মাণ শ্রমিক, গৃহ শিশু শ্রমিক, ইটভাঙা, ইটভাটা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, স্টিলের আলমারির দোকানের শ্রমিকের কাজ সহ সহজে মিলছে বিভিন্ন ধরনের কাজ। ফলে গজারিয়া এলাকায় বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম।

গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী আমাদের দেশে প্রায় ৩৮ ধরনের শিশু শ্রম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আজকের শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ। যেসব শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে তাদের সচেতনতার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। তবে গজারিয়া তে শিশু শ্রম এধরনের অভিযোগ নেই। পাওয়া গেলে বিশেষ করে যেসব শিশুরা কম বয়সে এসব কাজে নেমে পড়ছে, তাদের অভিভাবককে সচেতন করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তারা যেন তাদের শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে না পাঠায়। তিনি আরও বলেন, এসব ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম থেকে শিশু দের মুক্ত করতে না পারলে শিশুরা শারিরিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সেই সাথে তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে। সরকারের একার পক্ষ্যে শিশু শ্রম বন্ধ সম্ভব নয়। তাই শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলার জন্য শিশু শ্রম বন্ধে সকল কে এগিয়ে আসতে হবে এবং যারা শিশু শ্রমিক নিয়োগ দিবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

পুরাতন সংবাদ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০