০৮ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
ছয় মাস না যেতেই শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। একটি ঘর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ইদিলপুর ইউনিয়নের মহিষখালী মৌজায় ২১টি পরিবারের জন্য নির্মিত অধিকাংশ ঘরের মেঝে, দেয়াল ও পিলারে ফাটল ধরেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর ঘরগুলো উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বর্ষা মৌসুম শেষেঘরগুলো মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প- ২) ক তালিকার গৃহহীন-ভূমিহীন অসহায় পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে গত অর্থবছর ইদিলপুর ইউনিয়নের মহিষকান্দি মৌজায় ৬৭ শতাংশ জমির ওপর ২১ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য সেমি-পাকা ঘর তৈরি করা হয়। প্রতিটি ঘর তৈরিতে বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৭১ হাজার টাকা।
প্রথম পর্যায়ে নির্মিত এসব ঘর গত ২৩ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উপকারভোগীদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। সেমি-পাকা দুই কক্ষবিশিষ্ট এসব ঘরে সংযুক্ত একটি রান্নাঘর ও টয়লেট রয়েছে। ছয় মাস না পেরোতেই ঘরগুলোতে ফাটল দেখা দেয়। বৃষ্টি হলে চাল দিয়ে পানি পড়ছে। ঘর তৈরিতে নিম্নমানের সামগ্রীর ব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন বাসিন্দারা।
গোসাইরহাট উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হুসাইন। কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাহমিনা আক্তার চৌধুরী।
উপকারভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর দেয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু ঘরে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে ঠিকাদাররা। বৃষ্টি নামলেই অনেক ঘর দিয়ে পানি পড়ে। চালের কাঠ ভালো নয়। স্ক্রু ঢিলে হয়ে পানি পড়ছে পুরো ঘরে। এই কয়দিনেই ফ্লোর ফেটে গেছে। পিলারও ফাটা। কয়দিন টিকে থাকে জানি না।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা শিরিনা আক্তার ও ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘর দিছে আমরা অনেক খুশি হইছি। এখন সামনের পিলার ফেটে গেছে, ফ্লোরও ফেটে গেছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
আরেক বাসিন্দা সৈয়দন নেসা বলেন, ঘরের মেঝে ও বারান্দার মেঝেতে ফাটল ধরেছে। সব ঘরের একই অবস্থা। কোনো কোনো পিলারও ফেটে গেছে। এ নিয়ে এখন আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের লুৎফা বেগম বলেন, ‘আমার রান্নাঘর ও টয়লেট ভেঙে গেছে, সেখান থাকার মতো অবস্থা নেই। চেয়ারম্যান সাহেব ও পিআইও ম্যাডাম এসে আমাকে অন্য ঘরে থাকতে দিয়ে গেছেন। পরে আমার ঘর মেরামত করে দেবে বলেছেন। এ ঘরে সিমেন্ট কম দিছে, নাহলে এভাবে বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরতে পারে না। কদিন হলো আমরা আসছি এখনই এই অবস্থা। এই ঘরে কীভাবে থাকব, প্রশ্ন করেন তিনি।’
গোসাইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাহমিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, ওই জায়গার সিলেকশনটা ভুল ছিল। এবার অতিবর্ষণের কারণে অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এরপরও আশ্রয়ণটি টিকিয়ে রাখতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বর্ষা মৌসুম শেষে সমস্যাগুলো সমাধান করে দেয়া হবে।
গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তানভির আল নাসিফ বলেন, ‘আমি সম্প্রতি ওই উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। বিষয়টি জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’