৫ আগষ্ট ২০২১,আজকের মেঘনা ডটকম, এম এইচ বিপ্লব সিকদার :
অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নসহ প্রায় দুই কোটি জনগণের এ মহানগরীর নিরাপত্তায় সদা তৎপর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র প্রায় তেত্রিশ হাজার ফোর্স। বিভিন্ন ধরণের অপরাধ দমনের পাশাপাশি নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রুখতে এবং তাদের দ্রুত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে কাজ করছে ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। এই ডিভিশনের মধ্যস্থতায় মিশরীয় তরুণী Emam Hussen ফিরে পেল তার ভালবাসার সংসার।
মিশরীয় অল্পবয়সী তরুণী Emam, ভালোবেসে বিয়ে করে চাঁদপুরের ত্রিশ বছর বয়সী নূর সুজনকে। বাংলাদেশি তরুণ সুজনকে বিয়ের পর অনেক স্বপ্ন নিয়ে সুদূর মিশর থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছিল ২০২০ সালের অক্টোবরে।
নূর সুজন ২০০৮ সালে সৌদি আরবে যেয়ে সেখানে খুব ভালো কিছু করতে না পেরে ভিজিট ভিসায় ইন্ডিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়া, চীন ঘুরে ২০১৯ সালে তার মামার সহযোগিতায় ট্যুরিস্ট ভিসায় মিশরে গমন করে। সেখানে ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সংগ্রামে নামে সুজন। মিশরে বসবাসরত মামার পরামর্শে মিশরীয় তরুণী Emam Hussen এর সাথে ২০১৯ সালের ৫ মে মিশরীয় আইন অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় সুজন। বৈশ্বিক মহামারী করোনার নেতিবাচক প্রভাবে ব্যবসার ক্ষতি হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়ে সুজন। Emam এর পরিবারও কোনো সহায়তা না করায় বাধ্য হয়ে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা মিশরীয় বধূকে নিয়ে ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশে চলে আসে। বাংলাদেশেই জন্ম নেয় সুজন-Emam এর পুত্র মালেক। প্রথম দিকে সব ঠিকই চলছিল কিন্তু পরের দিকে শুরু হয় দুই দেশের সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব! নূর সুজনের উপার্জন না থাকায় তার পরিবারের অন্য সদস্যরা মিশরীয় বধূকে আর সহ্য করতে পারছিলো না। শুরু হয় সংঘাত। Emam কে পড়তে হয় কঠিন পরীক্ষায়। দিন দিন বৈরী আবহাওয়া, ভাষা ও সংস্কৃতিগত পার্থক্যে Emam এর স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে থাকে। বিভিন্ন অজুহাতে তিক্ততা বেড়েই চলে এবং শারীরিক নির্যাতনও শুরু হয় Emam এর উপর । Emam এসব কষ্টের কথা তার মাকে জানালে ঘটনার নাটকীয় মোড় নেয়।
ভিকটিমকে নির্যাতনের বিষয়টি তার মা বাংলাদেশের The Embassy Of The Arab Republic of Egypt কে জানায়। ভিকটিমের মায়ের এ অভিযোগ The Embassy Of The Arab Republic of Egypt ডিএমপির ডিপ্লোমেটিক ডিভিশনকে অবহিত করে মেয়েটিকে দ্রুত উদ্ধার করার অনুরোধ করে। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে ওয়ারী বিভাগ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মিশরীয় নাগরিক Emam কে তার স্বামী নূর সুজন এর হেফাজত থেকে ২৬ জুলাই, ২০২১ তারিখ রাত ২১:৪৫ টায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
থানা পুলিশ ভিকটিম Emam ও তার আট মাসের পুত্র মালেককে ২৬ জুলাই, ২০২১ নিরাপদ হেফাজতসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে প্রেরণ করে। এ ডিভিশন Emam ও তার সন্তানের রুচি অনুসারে খাবার, পোশাক ও অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করে।
ভিকটিম Emam এর মানসিক বিপর্যয়কে কাটিয়ে তুলতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা নেয়া হয়। মানসিক বিপর্যয় কাটাতে Emam কে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় নিয়ে গুগল ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। পরবর্তীতে Emam এর স্বামী সুজনের সাথে দীর্ঘ সময় কথা বলার ব্যবস্থা করে। Emam কে তার ভালোবাসা আর সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য তার স্বামীকে আর একবার সুযোগ দিতে অনুরোধ করে ডিএমপি। Emam কিছুটা বাংলা বোঝায় প্রতিদিন উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন টিম Emam এর সাথে বারবার কথা বলতে থাকে। অবশেষে Emam এই ডিভিশনের নারী পুলিশের কাছে তার মনের সব কষ্ট শেয়ার করে। এই ডিভিশনের কর্মকর্তারা জানতে পারে যে, মিশরীয় ভিকটিম Emam আবারও মা হতে যাচ্ছে।
সুজন-Emam এর সংসার টিকিয়ে রাখতে এবার বদ্ধপরিকর হন উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন এর কর্মকর্তা উপ-পুলিশ কমিশনার হামিদা পারভীন, পিপিএম। মায়ের মমতা দিয়ে তিনি Emam কে বোঝাতে থাকেন। তার নিরলস প্রচেষ্টা অবশেষে আলোর মুখ দেখে। পরবর্তী সময়ে মিশর এম্বাসির প্রতিনিধির উপস্থিতিতে Emam আবার তার সংসারে ফিরে যাবার এবং স্বামীর সাথে বাংলাদেশে থাকতে চাওয়ার কথা জানায়। মামলা করার প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে Emam। কিছু শর্ত সাপেক্ষে আর একবার সুযোগ দিতে চায় বাংলাদেশী স্বামী সুজনকে। মিশরীয় তরুণী তার ভালোবাসার সংসার ফিরে পাবে, সব সমস্যার সমাধান হবে- এ দৃঢ় বিশ্বাস টিম উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন এর।