ডেস্ক রিপোর্ট।।
ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার শেরপুরের নকলা উপজেলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান
প্রকল্পের কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ক্রয়সংক্রান্ত তথ্য চাওয়াকে কেন্দ্র করে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দৈনিক দেশ রূপান্তরের শেরপুরের নকলা উপজেলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানাকে কারাদণ্ড দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে তাঁর ব্যাখ্যা দিয়েছেন নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন। সূত্র :আজকের পত্রিকা
গতকাল শনিবার (৯ মার্চ) রাতে ইউএনওর সরকারি বাসভবনে ওই মতবিনিময় সভা হয়। সভায় ইউএনও উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিক রানার পরিবার দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে রানা জামিনে মুক্তি পেতে পারেন।
রানার বাড়ি নকলা পৌরসভার বাজারদী মহল্লায়। তাঁর পিতার নাম আলহাজ লিয়াকত আলী। রানা বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইউএনও সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৫ মার্চ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমি আমার অফিসে সার্বিক মনিটরিং কমিটির মিটিং করছিলাম। হঠাৎ বাহিরে হট্টগোলের শব্দ পাই। ওই সময় আমার অফিসের সিএ শিলা আক্তার এসে আমাকে জানায়, রানা ভাই রুমে এসে ফাইল চাচ্ছে। তখন মিটিংয়ে উপস্থিত জেলা পরিষদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন সেখানে গিয়ে তাঁকে থামানোর চেষ্টা করেন। তখন হট্টগোল আরও বেড়ে গেলে আমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফকে হট্টগোল থামাতে ডেকে পাঠাই। তিনি রানাকে নিভৃত করার চেষ্টা করেন। পরে সেখানে গিয়ে রানার সাথে কথা বলেন মিটিং উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মুনসুর। রানা তাঁর সাথেও খারাপ আচরণ করেন এবং তাঁকে ধাক্কা দেন। আমরা রানাকে ৩০ মিনিট সময় দিয়েছি সে যেন চলে যায়। কিন্তু সে চলে না যাওয়ায় একটা বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত করতে তাৎক্ষণিক আমরা রানার বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। পুলিশ ডেকে সহকারী কমিশনার শিহাবুল আরিফের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আমরা রানাকে ১৮৮ ও ৫০৯ ধারায় অভিযুক্ত করে ৬ মাসের দণ্ডাদেশ দিয়ে তাঁকে জেলহাজতে পাঠিয়েছি।’
ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন বলেন, ‘এ জন্য রানার পরিবার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর জামিনের আবেদন করতে পারেন এবং রানা জামিনে মুক্তি পেতে পারেন। রানা জাইকার ৫০ লাখ টাকার প্রকল্প নিয়ে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে আবেদন করেছেন। আমার হাতে আরও প্রায় ২০ দিনের মতো সময় আছে। এটা নিয়ে এখনই এত হট্টগোলের কী আছে?’
সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার শহীদুল ইসলাম হীরার এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘যেখানে ঘটনা ঘটেছে, সেটি সিসি টিভির আওতাভুক্ত নয়। তাই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেওয়া সম্ভব নয়।’
রানার স্ত্রী বন্যা আক্তারের অভিযোগ, ৫ মার্চ মঙ্গলবার রানা তাঁর ছেলে শাহরিয়ার জাহান মাহিনকে (১৫) সঙ্গে নিয়ে এডিপি প্রকল্পের কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ক্রয়সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিনের কার্যালয়ে আবেদন জমা দেন। আবেদনটি কার্যালয়ের গোপনীয় শাখার কর্মচারী (সিএ) শীলার কাছে জমা দিয়ে রিসিভড কপি চান রানা। শীলা তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন। রানা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর আবর শীলার কাছে রিসিভড কপি চান।
তখন শীলা বলেন, ইউএনও ছাড়া রিসিভড কপি দেওয়া যাবে না। পরে রানা মোবাইল ফোনে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান। এতে ইউএনও ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে নকলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইউএনও ও সিএ শীলার সাথে অসদাচরণের অভিযোগে রানাকে গ্রেপ্তার করে। পরে ইউএনওর নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফ ওই কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে রানাকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন।
এ ব্যাপারে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে জেলা পরিষদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন ও বীর মুক্তযোদ্ধা আবুল মুনসুর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সভায় ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মেরাজ উদ্দিন, সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার শহীদুল ইসলাম হীরা, একাত্তর টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি শাকিল মুরাদ, এখন টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি জাহিদুল খান সৌরভ, বাংলা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি নাঈম ইসলাম, নিউজ বাংলা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি শাহরিয়ার শাকিল, প্রেসক্লাব নালিতাবাড়ির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ও কার্যকরী সদস্য মঞ্জুরুল আহসান, স্থানীয় সাংবাদিক দৈনিক জাহান প্রতিনিধি ফুয়াদ হোসেন, আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন আহমেদ, বিজয় টিভি প্রতিনিধি ইউসুফ আলী মন্ডল, আলোকিত বাংলাদেশের প্রতিনিধি মোশারফ হোসাইন, যায়যায়দিনের প্রতিনিধি শফিউল আলম লাভলু, অপরাধ তথ্যচিত্রের প্রতিনিধি আরিফুর রহমান, আশ্রয় প্রতিদিনের প্রতিনিধি জিয়াউল আলম, জনবাণীর প্রতিনিধি আইনুল নাঈম উপস্থিত ছিলেন।