এস এম রাজু আহমেদঃ- নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ৫৯৭ টি মসজিদের নামে অনুদনের টাকা প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা আত্মসাতের উদ্দেশে একই মসজিদের নামে দুইবার চেক প্রদান করা হয়।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত চেকের এ ঘটনা জানা জানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃস্টি হয়। সচেতনমহল মনে করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মসজিদ কমিটির সাথে যোগসাজসে ৮২টি চেকের মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন। জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৫৯৭ টি মসজিদের নামে ২৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই সব মসজিদের তালিকা প্রদান করেন সোনারগাঁ উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার আনোয়ারা বেগম। পরে তিনি যাচাই করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেন। ইউএনও অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কতিপয় মসজিদ কমিটির সভাপতিদের সাথে যোগসাজস করেন। তিনি সোনারগাঁ উপজেলার ৮২টি মসজিদের নামে দ্বিগুন অর্থ প্রদান করে তা আত্মসাতের চেষ্টা করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে জনক্রোদের মুখে ইউএনও সাইদুল ইসলাম ৮২টি চেকের প্রায় ৫ লাখ টাকা সরকারি কোষাগাড়ে ফেরত দিতে বাধ্য হন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামে নিজের দোষ ধামাচাপা দিতে অন্যকে ফাঁসানোর পায়তারা করছে। তিনি একজন নির্দোষ ব্যক্তির নামে অপপ্রোচার চালাচ্ছেন। ইউএনওর অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। যতো শিগগিরই ইউএনওর বদলি চাই। লোকমান হোসেন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিষ্ঠা করা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সুনাম ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে ও বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নে গোপনে বিএনপির সাথে আতাত করছে ইউএনও সাইদুল ইসলাম। তিনি সোনারগাঁয়ের বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ত্রান বিতরন ও ফটোসেশন করছেন। এতে করে সোনাগাঁয়ের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে সুশীল সমাজ মনে করছে। অবিলম্বে ইউএনও সাইদুল ইসলামকে চাকুরী থেকে অপসারন করা না হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন তাতে বাঁধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া মহাজোটের অন্যতম শরীক দল জাতীয় পার্টিও তাকে চাকুরী থেকে অপসারনের জোর দাবি জানিয়েছে। সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম ৪ মাস হয় সোনারগাঁয়ে যোগদান করেছে। যোগদানের পরই বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে ত্রাণ কমিটি গঠন করে। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতাকর্মীদের পাত্তাই দিচ্ছেন না। ইওএনও সাইদুল ইসলাম এক সময় বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ঢাকার ধানমন্ডিতে রয়েছে আলিশান ফ্লাট। যা দুদুক অনুসন্ধান করলেই সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সোনারগাঁ উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার আনোয়ারা বেগম বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে মসজিদের তালিকা করে তা যাচাই বাছাই এর জন্য ইউএনওর কাছে দেওয়া হয়। ইউএনও চুড়ান্ত করে চেক প্রদান করেন। কিভাবে চেক ডাবল হলো সেটা ইউএনও জানে আমি জানি না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইমাম-মোয়াজ্জেমদের নামে যে টাকা বরাদ্দ দেয় তা ইউএনওর নামে ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দেই। পরে তিনি সেই টাকা বন্টন করেন। আত্মসাত হতেই পারে, তবে হলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: সাইদুল ইসলাম বলেন, ভুলবসত ৮২টি মসজিদের নামে দুটি করে চেক ইস্যু হয়। যার একটি বাতিল করা হয়েছে। সোনারগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, উপজেলার ৫৯৭টি মসজিদের নামের তালিকা করেন ইউএনও, যেখানে অনেক মসজিদের নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। সেখানে ৮২টি মসজিদের নামে দুইবার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইউএনও সাইদুল ইসলাম তার পছন্দের লোকদের প্রধান্য দিয়ে মসজিদের নামের তালিকা তৈরী করেছেন বলেই বহু মসজিদ তালিকার বাইরে রয়েছে।