বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীর শ্যামলী ও মোহাম্মদপুরে কয়েকটি নামসর্বস্ব হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। এ সময় শ্যামলীর হাইপোথাইরয়েড সেন্টারের দুই কর্মচারী দুই বছর কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আর সন্ধী ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনার দায়ে দুই দালালকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
শনিবার (৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত ওষুধ প্রশাসন ও র্যাব-২ এর সহযোগিতায় কয়েকটি হাসপাতালে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন র্যাব সদরদফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, করোনায় মারা যাওয়া চিকিৎসকের নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে রোগীদের প্যাথলজি রিপোর্ট দিতো রাজধানীর শ্যামলীর হাইপোথাইরয়েড সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এই অভিযোগে এই প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মচারী সোহেল রানা ও রাসেল দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন র্যাব ভ্রাম্যমান আদালত। পরে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী স্কয়ারের বিপরীতে ২/১ নম্বর বাড়ির শ্যামলী হাইপোথাইরয়েড সেন্টারে অভিযান চালান র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। অভিযানে হাইপোথাইরয়েড সেন্টারের ভুয়া ল্যাবের সন্ধান পায়। সারওয়ার আলম জানান, হাইপোথাইরয়েড সেন্টার নামে এই প্রতিষ্ঠানটি হার মানিয়েছে রিজেন্ট কিংবা জেকেজিকেও। ১০ বছর ধরে ল্যাব পরিচালনা করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। থাইরয়েডের নানা রিপোর্টসহ হেপাটাইটিস, ব্ল্যাড কালচারসহ চলতো নানা পরীক্ষা। অথচ সেই ল্যাবের বেহাল দশা। সারওয়ার আলম জানান, প্রতিষ্ঠানটি প্যাথলজির রিপোর্ট দিতো করোনায় মৃত অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষরে।
অক্টোবরে তার নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। অথচ এই চিকিৎসক করোনায় প্রাণ হারান মে মাসের প্রথম সপ্তাহে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা বলছেন দুই একটা টেস্ট করা হলেও বাকিগুলো দেয়া হতো অনুমান করে। এছাড়া আরও মিলেছে চিকিৎসকের স্বাক্ষর করা অসংখ্য ভুয়া রিপোর্ট। হাইপোথাইরয়েড সেন্টার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কুরিয়ারে স্যাম্পল সংগ্রহ করে মেইলে রিপোর্ট দিতো।
এরপর মোহাম্মদপুরের সন্ধী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। সেখানে টেকনোলজিস্ট বা জনশক্তি না থাকার কারণে ওই প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনার দায়ে মাহমুদুল হাসান আপেল (২৮) ও রাজীব সরকার (২৬) নামে দুই দালালকে ৬ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। সারওয়ার আলম জানান, আজ(শনিবার) দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়েছে।
সন্ধী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দালালের মাধ্যমে হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা হতো। এই অপরাধে দুই দালালকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ফুলটাইম টেকনিশিয়ান বা জনশক্তি না থাকার কারণে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, আমরা চাই প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে চলুক। জেল জরিমানার আওতায় না আসুক। যৌথভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত আছে।