১০ নভেম্বর ২০২০, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্ট
জেবুন্নাহার। বাড়ি বগুড়াতে। তিনি এখন গ্রামের রোল মডেল। ১০ বছর আগে মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে কোয়েল পাখির খামার করেন। সেখান থেকে তিনি এখন কোটি টাকার মালিক। এই ১০ বছরে শুধু নিজের ভাগ্যের বদল করেননি জেবুন্নাহার। পাশাপাশি তার গ্রামের প্রায় আড়াইশ নারীকে স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করেছেন।
সাবগ্রাম ইউনিয়নের আকাশতারা গ্রামে বাড়ি জেবুন্নাহারের। তার বাবার বাড়ি নওগাঁ জেলার ধামইরহাটে। ২০০০ সালে তার বিয়ে হয় বগুড়া সদরের আকাশতারা গ্রামের মজনু রহমানের সঙ্গে। বিয়ের পর বাবার বাড়িতেই থাকতেন জেবুন্নাহার। সেখানে কেটে যায় বিবাহিত জীবনের ১০ বছর। এক সময় দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে বগুড়ায় স্বামীর বাড়ি আকাশতারায় চলে আসেন। তখন তার স্বামী বেকার। অনেক কষ্টে দিন কাটছিল। এমন সময় গ্রামের আব্দুল বারী নামে এক ব্যক্তির পরামর্শে কোয়েল পাখি পালনের সিদ্ধান্ত নেন জেবুন্নাহার। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ঘুরতে শুরু করে ভাগ্যের চাকা। এখন জেবুন্নাহার একজন সফল উদ্যোক্তা। নিজের উপার্জিত ১৫ লাখ টাকায় কিনেছেন কোয়েলের বাচ্চা ফোটানোর ইনকিউটেবর এবং গড়ে তুলেছেন একটি পাঁচতলা ভবন। সেখানে চলে কোয়েল পাখি পালন, পরিচর্যা ও বাচ্চা ফোটানো। খামারে স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও ১০ জন কর্মচারী কাজ করছেন।
জেবুন্নাহার বলেন, বাবার বাড়ি থেকে আসার পর আমাদের সংসারে অভাব লেগেই থাকতো। ছেলে-মেয়েও বড় হচ্ছিল। তাদের স্কুলে ভর্তি করানোর খুব দরকার ছিলো। স্বামী বেকার থাকায় কোনো কুল কিনারা পাচ্ছিলাম না। এমন সময় কোয়েল পালনের পরামর্শ পাই। সে সময় মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে আড়াই হাজার পিস কোয়েল পাখির বাচ্চা কিনে খামার করি। একমাস পর বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা লাভ করি। সেই টাকা দিয়ে আরও চার হাজার বাচ্চা কিনে পুরোদমে শুরু করি কোয়েল পাখির খামার। সেখান থেকে লাভ করি ৪০ হাজার টাকা। পরে গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নারীদেরকে ব্যবসায় লাভের কথা বলে উদ্বুদ্ধ করি কোয়েল পাখি পালনে। এখন খামার থেকে প্রতি মাসে এক লাখ কোয়েল পাখির বাচ্চা বিক্রি করি। গ্রামের নারীরা আমার বাড়ি থেকে এসব বাচ্চা নিয়ে যান।’
একই গ্রামের মনোয়ারা বেগম, বড়িয়া গ্রামের সুফিয়া, হিরা বেগমসহ আরও বেশ কয়েকজন নারী জানালেন তারও জেবুন্নাহারকে দেখে কোয়েল পাখি পালন করে সংসারের অভাব দূর করেছেন। এখন ভালো আছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সদরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোয়েল পাখির খামার রয়েছে সাবগ্রাম ইউনিয়নের আকাশতারা, ধুমাপাড়া ও বড়িয়া বটতলা গ্রামে। এসব গ্রামের নারীরা জেবুন্নাহারের হ্যাচারিসহ ওই এলাকার অন্যান্য হ্যাচারি থেকে এক দিনের বাচ্চা কেনেন প্রতি পিস ৬ টাকায়। এই বাচ্চাগুলো খামারে ২৪ দিন পালন করেন। তবে ১৮ দিন থেকেই বাচ্চা বিক্রির উপযুক্ত হয়। এ সময় বগুড়া, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা এসে বাচ্চাগুলো কিনে নিয়ে যান। কোয়েল পাখির চাহিদা বগুড়ার চেয়ে বাইরের জেলাতেই বেশি। বগুড়ার বাইরের ব্যাপারীরা প্রতি পিস কোয়েল পাখি কিনে নিয়ে যান ২৫-২৮ টাকায়। একজন খামারীর ১ হাজার পিস কোয়েল পাখির বাচ্চা কেনাসহ ১৮ দিন পর্যন্ত পালন করতে খরচ পড়ে ১৩ হাজার টাকার মতো। নির্দিষ্ট সময় পর বিক্রি করলে প্রতি হাজারে লাভ হয় ৫-৬ হাজার টাকা।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘জেলায় ৩৬৮টি কোয়েল পাখির খামার রয়েছে। সদর উপজেলা, শেরপুর, ধুনট, আদমদীঘি ও কাহালুতে এসব পাখির খামার রযেছে। তবে এর মধ্যে বগুড়া সদরের সাবগ্রাম ইউনিয়নেই বেশি। আমরা মনিটরিং করি। তাদেরকে প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে কোয়েল পাখি পালন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, ভ্যাকসিন ও টেকনিক্যাল সাপোর্টগুলো দেওয়া হয়।’