২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং, আজকের মেঘনা ডটকম,
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
স্টুডেন্ট ভিসা, জব ভিসা দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা এলাকার নিরীহ লোকজন থেকে হাতিয়ে নিয়ে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুনবতীর খাটরা গ্রামের মোহাম্মদ জাহান কবির শিপন এখন যুক্তরাজ্যে।
ভুক্তভোগীরা উপায়ান্তর না পেয়ে আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন। এই প্রতারকের বাবা আবদুল কাদের ছিলেন স্কুল শিক্ষক। শিপন বর্তমানে যুক্তরাজ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করছেন বলে তথ্য রয়েছে।
গ্রামের মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য প্রতারণার নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয় শিপন। স্টুডেন্ট ভিসা, জব ভিসা দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা এলাকার নিরীহ লোকজন থেকে হাতিয়ে নেয়। শিক্ষকের ছেলে হিসাবে সবাই তাকে বিশ্বাস করে এবং তাদের ছেলেমেয়েদের বিদেশে পাঠানোর জন্য লাখ লাখ টাকা তার হাতে তুলে দেয়। শিপন স্টুডেন্ট ভিসা বা জব ভিসার নামে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে মানুষকে বিদেশে পাঠায়।
ভুয়া কাগজপত্রের কারণে বিদেশে অনেকে আটকা পড়ে যায় এবং জেলে যেতে হয়। আবার অনেকে বিদেশের মাটিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন
অবৈধ পন্থায় মানব পাচার করে মানুষের সব টাকা পয়সা নিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে বিদেশে পাড়ি জমায় শিপন। তার এ প্রতারণার জন্য গ্রামের নিরীহ লোকজন তার বিরুদ্ধে জিডি ও মামলা রুজু করেছে।
গুনবতী ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী আরো দুটি ইউনিয়ন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে এ প্রতারণা করেছে শিপন। সম্প্রতি তার ভাই হুমায়ুন প্রতারনার মামলায় গ্রেফতার হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে।
বাংলাদেশী পাসপোর্ট (নং EK 192086) নিয়ে গত দেড় দশক ধরে যুক্তরাজ্যেও লন্ডনসহ বিভিন্ন স্থানে স্বপরিবারে (স্ত্রী নাসরিন আহমেদ ও তিন সন্তানসহ) বসবাস করে শিপন। ভুক্তভোগীরা তাকে পাওনা উদ্ধারে নানা চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন।
জানা গেছে, জাহান কবির শিপন বার বার স্থান পরিবর্তন করে নানাভাবে পরিচয় দিয়ে দেশি বিদেশীদের সাথে প্রতারনার সুযোগ গ্রহণ করে। প্রথমে শিক্ষার্থী হিসাবে লন্ডনে আসেন। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে পরিচালনা করছেন কয়েকটি রেস্টুরেন্ট একটি গ্রোসারী দোকান ও একটি কফি শপ। মুখে নিজের প্রতিষ্ঠান দাবী করলেও একটি প্রতিষ্ঠানও কাগজপত্রে নিজের নামে নেই বলে জানা যায়।
বিদেশে তিনি সফল ব্যবসায়ী তাই এখানে দেশ থেকে লোক এনে প্রতিষ্ঠিত করবেন এ লোভ দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেন। কথা অনুযায়ী কাজ করেননি শিপন। প্রতারণা করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকেও নগদে হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার হাজার পাউন্ড এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
শিপনের কাছে অর্থ খুইয়েছেন এমন ২০ ব্যক্তির সংগে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ হয়েছে এ প্রতিবেদকের সংগে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশের মোর্শেদের কাছ থেকে ১২ হাজার পাউন্ড সিলেটের মামুনের কাছ থেকে ৫ হাজার পাউন্ড। জনাব কয়েসের কাছ থেকে নিয়েছে ১৫ হাজার পাউন্ড, সিলেটের বেগম জমিলার কাছ থেকে বাংলাদেশী মুদ্রার ৩৫ লক্ষ টাকা। সিলেটের মুসলেম মিয়ার কাছ থেকে ১৬ হাজার পাউন্ড। ফেনীর সেলিমের কাছ থেকে ৫ হাজার পাউন্ড। ইংল্যান্ড প্রবাসী পিরোজপুরের জাহিদ হাসানের কাছ থেকে ১৮ হাজার পাউন্ড। চট্টগ্রামের শাহ মোহাম্মদ খান গিয়াসের কাছ থেকে নিয়েছে ৮৫ হাজার পাউন্ড। চট্টগ্রামের রাসেলের কাছ থেকে ৬২ হাজার পাউন্ড। সৌদি প্রবাসী ফেনীর জিয়ার কাছ থেকে বাংলাদেশী মুদ্রার ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। ফেনীর জিয়ার বন্ধু এবং শিপনের সহপাঠি তুহিনের কাছ থেকে ৭ লক্ষ টাকা। জিয়ার আরেক বন্ধু কুমিল্লার গুনবতীর রুবেলের কাছ থেকে নিয়েছেন সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা।
লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশী এবং বিদেশী নাগরিকদের কাছে শিপন বড় ধরণের পেশাদার প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত এবং আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের সাথে জড়িত আছে বলে অনেকে দাবী করেন।
ভুক্তভোগীরা দেশ ও প্রবাসে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।