• বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন

রাজশাহী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট

রিপোর্টার : / ২২৯ বার পঠিত
আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১

১১ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

লকডাউন শুরুর আগেই রাজশাহী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। শুধু রাজশাহীতে নয়, এর বাইরের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনার এই ভয়ঙ্কর ডেল্টা সংস্করণ যা ভারতীয় ধরন। ফলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেমন বেড়েছে রোগী, তেমন বেড়েছে মৃত্যুর হার।

এদিকে, প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার (১১ জুন) বিকাল ৫টা থেকে রাজশাহী নগরীতে লকডাউন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এর আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা দেখা গেছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মার্কেট, দোকানপাট, শপিংমলসহ গণপরিবহন চলাচলে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে; তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানো জনসাধারণকে ঘরমুখী করার জন্য মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। লক্ষ্য একটায় করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে সবাইকে মুক্ত রাখা।

তবে লকডাউন ঘোষণার আগেই করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়ার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী। একই সঙ্গে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের কথা বলেছিলেন তিনি।

যদিও রাজশাহী অঞ্চলের মৌসুমি ফল ও জীবিকাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে কঠোর লকডাউনের পরিবর্তে বিশেষ বিধিনিষেধ দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রামেক হাসপাতালে করোনা রোগীর মৃত্যু ও শনাক্তের হার বেড়েছে দ্বিগুণ।

গতকাল রাতে জরুরি এক সভা শেষে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার হুমায়ুন কবির সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাজশাহীতে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মে মাসের মধ্যভাগে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট শয্যা সংখ্যা ছিল ৬৫। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজশাহী অঞ্চলের সব জেলার পরিস্থিতি আঁচ করে আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। দফায় দফায় করোনা ইউনিটের ওয়ার্ড ও শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা।

শুক্রবার পর্যন্ত হাসপাতালের ১০টি ওয়ার্ডে মোট ২৭১টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ২৯৭ জন। আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে ১৫ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে সাত জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন, বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে গত ২৪ মে থেকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন মোট ১৫৭ জন। তাদের মধ্যে ৮৩ জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।

রাজশাহীর দুটি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরির বৃহস্পতিবারের রিপোর্টে দেখা গেছে, রাজশাহী জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ৩৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। নাটোরে এই হার ৬০ দশমিক ২৭ শতাংশ, নওগাঁয় ৫০ শতাংশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৯ শতাংশ।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমরা দেখছিলাম যে, আমাদের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা সীমিত। তাই আমরা সবাইকে সতর্ক হতে অনুরোধ করছিলাম। কিন্তু সেটা যখন হতে দেখিনি তখন আমরা যতটা সম্ভব সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এই হাসপাতালের ১৮টি শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সব সময় পূর্ণ থাকছে। নতুন করে ভেন্টিলেটর যুক্ত করতে চাইলেও অবকাঠামো না থাকায় তা সম্ভব হবে না। মোট ২৭১টি শয্যার সব কটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন আছে। এ ছাড়া, ১৮৩টি শয্যায় অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে। ৭০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডার খালি হলে পূর্ণ করে নিয়ে আসার লোকবলের অভাব। এখন আমরা যেটা করছি, নতুন আরও ওয়ার্ড করোনা ইউনিটে যুক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ জন্য প্রতিটি শয্যায় আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ লাইন যুক্ত করতে হচ্ছে। রাত-দিন এই কাজই করতে হচ্ছে। মুমূর্ষু রোগী এলে তাকে তো ফেরানো যাবে না। তাকে তো চিকিৎসা দিতে হবে।’

শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘দেরিতে হলেও লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একেবারে না হওয়ার থেকে দেরিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো। সতর্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। পরিস্থিতি এখনো সাধ্যের বাইরে না। এখনো আমরা সামলাতে পারছি। রোগী কমানো অসম্ভব হলে আমাদের আর কিছু করার থাকবে না।’

তিনি বলেন, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিরেন্টে আক্রান্ত কতজন আছেন, এটা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো না। কেন না আমাদের এটি পরীক্ষা করার মতো ব্যবস্থা নেই। তবে কিছুদিন আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নমুনা পরীক্ষা করে ঢাকা থেকে জানানো হয়েছিল প্রায় ৮০ শতাংশই ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। আগে যারা আক্রান্ত হয়েছেন এবং বর্তমানে যারা হচ্ছেন, এদের লক্ষণ কিন্তু একই। রোগীদের লক্ষণ দেখেই বোঝা যায় ৮০ শতাংশই ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এটা গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে। কত দূরে গিয়ে এটা থামবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা ও মহানন্দা নদীর সংযোগ ভারতীয় নদীর সঙ্গে। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানের মানুষ নদীর মাছ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে শামীম ইয়াজদানী বলেন, নদীর পানির মাধ্যমে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে কি না- এ বিষয়ে কোনও গবেষণা হয়নি। এটি সম্ভব কি না তা আমি জানি না।

ভারতে মে মাসের মধ্যভাগেই যখন ডেল্টা রূপের করেনাভাইরাসের তাণ্ডব চলছিল, রামেক হাসপাতালের পরিচালকের কাছে খবর আসে যে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে মানুষ প্রবেশ করছে। সে সময় ঈদ কেন্দ্রিক কেনাকাটার ভিড় বাড়ছিল এবং আমের ব্যবসার প্রস্তুতি চলছিল। ঈদের ছুটিতে অনেকে বাড়িতে আসেন। রাজশাহী অঞ্চলের অনেকে যারা দেশের নানা প্রান্তে কৃষি শ্রমিক হিসেবে ধান কাটার জন্য গিয়েছিলেন, তারাও ফিরে আসেন।

শামীম বলেন, তিনি ১৭ মে স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন। একইসঙ্গে লকডাউনের সুপারিশ করেছিলেন। পরের কয়েক দিনেও তিনি গণমাধ্যম ও অনান্য মাধ্যমে বারবার বলেছেন, সংক্রমণ ছড়ানো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লকডাউনের কোনো বিকল্প নেই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৪ মে থেকে লকডাউন শুরু হয়। কিন্তু দুই সপ্তাহ পরে সেখানেও নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। ২৯ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলাসহ দেশের সীমান্তবর্তী আট জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

পুরাতন সংবাদ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১