• শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন

ভারতীয় গরু ঠেকাতে সীমান্তে রেড এলার্ট: কুরবানি পশুর চাহিদা পূরণে প্রস্তুত খামারিরা

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৭৯ বার পঠিত
আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১

১৭ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ফেনীতে কোরবানির পশুর শতভাগ চাহিদা মেটাতে পারবে বলছেন ফেনীর গোরুর খামারিরা। ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকলে এবার আশানুরূপ দাম পাবেন বলেও ধারণা করছেন তারা৷ জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৭২ হাজার। এ জন্য লালন-পালন করা হচ্ছে ৮০ হাজার ৮৬৫টি গবাদি পশু।

চাহিদার চেয়ে মেটাতে জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমান। তিনি জানান, আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে প্রায় ৭২ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে ৮০ হাজার ৮৬৫ টি গবাদি পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। ফলে ফেনীতে এবার কুরবানির পশু সংকট হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এক বা একাধিক কুরবানি পশু লালন পালন করছেন। এর সংখ্যাও প্রায় ২০ হাজারের বেশি।

জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের তথ্যমতে, ফেনী সদর উপজেলায় ২১ হাজার ৩২২, দাগনভূঞা ৮ হাজার ৮৩০, ছাগলনাইয়া ১৮ হাজার ৭২৫, সোনাগাজী ১৭ হাজার ৫০৫, ফুলগাজী ৬ হাজার ২০৬ এবং পরশুরাম ৮ হাজার ২২৭টি পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

পশুর যোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থাকবে বলে ধারণা করছেন জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা। তিনি জানান, তবে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। যদি আমদানি বন্ধ করা যায় তবে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবেন। কৃষক ও খামারিরা যাতে কোরবানির পশুর ন্যায্যদাম পান সে জন্য সীমান্ত এলাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নজরদারি বাড়াতে হবে৷

ফেনী সদরের কাজীরবাগের গিল্লাবাড়িয়ায় সিরাজ-মনি ডেইরি ফার্মে কোরবানির জন্য ১৪টি পশু লালন করছেন খামারি শরীফুল ইসলাম মাসুম। তার নতুন খামারে প্রথমবার কোরবানির জন্য ৬ মাস ধরে গরু লালন পালন করছেন তিনি। মাসুম জানান, বর্তমানে গরু লালন পালনে যে খরচ হচ্ছে, ঈদ বাজারে ভারতীয় গরু প্রবেশ করলে স্থানীয় খামারিরা বিপাকে পড়বে। যদি বাজারে বাইরে থেকে গরু না আসে তাহলে লাভের মুখ দেখবে স্থানীয়রা। আমাদের খরচ উঠে আসবে।

রাসেল পাটোয়ারী নামে এক খামারি জানান, আসন্ন কোরবানির জন্য ৩০টি গরু প্রস্তুত করছি। প্রতিটি গরু ১ লাখ বা তারও বেশি বিক্রি করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। রাসেল জানান, করোনায় কর্মসংস্থান হারিয়ে অনেকে যুবক গবাদি পশু লালন-পালন মনোনিবেশ করেছে। ছোট-বড় অনেক খামারি বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগতভাবে কুরবানির জন্য পশু লালন পালন করছেন। সে হিসেবে চাহিদার তুলনায় বেশি কুরবানির পশু যোগান দেয়া যাবে। দেশীয় খামারি ও কৃষকদের স্বার্থে চোরাই পথে বিদেশি গরু আনা বন্ধ করতে হবে। নজরুল ইসলাম নামে আরো এক খামারি জানান, গো-খাদ্যের দাম বেশি তাই লাভ কম হবে৷ তবে ফেনীতে যে পরিমাণ কুরবানি পশু লালন-পালন করা হয়েছে জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও বিক্রি করা যাবে৷ গবাদি পশু লালন-পালনে প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে আরও বেশি সহযোগিতা করতে হবে।

রাশেদ নামে এক ছাগল খামারি বলেন, কুরবানিতে ছাগলের চাহিদাও অনেক৷ এবার কুরবানির বাজার বিক্রির জন্য ১৫টি ছাগল প্রস্তুত করছি। প্রতিটি ছাগল ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে।

এদিকে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি)। ফেনী ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আবদুর রহিম জানান, কুরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে সীমান্তে গরু চোরাচালান রোধে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি সদস্যরা, বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। ফেনীর ১০২ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার মধ্যে দুই স্থানে ৫৭৯ ও ৩৩৪ মিটার সীমানা অরক্ষিত। বিজিবির তৎপরতায় এ দুই স্থান দিয়ে গরু চোরাচালান এখন বন্ধ। কুরবানি উপলক্ষ্যে সকল চোরাচালান রোধে বিজিবির সদস্যদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি৷

কুরবানি পশু লালন-পালনে নিয়মিত খামারিদের সহযোগিতা করছে প্রাণি সম্পদ অফিস। ফেনী সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নাজমুল হক জানান, কুরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকে নিয়মিত খামার পরিদর্শন, খামারিদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও যাবতীয় সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। এছাড়া বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে ৪/৫ মাসের মধ্যে কুরবানি পশু মোটাতাজা করার বিষয়ে খামারি ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খামারিরা নিয়ম মেনে পরিকল্পনা মাফিক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও সংশ্লিষ্ট ঔষধ ব্যবহার করে পশুকে লালন পালন করছেন৷ তিনি আরো জানান, ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় ও করোনা পরিস্থিতিতে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় অনেকে গবাদি পশু লালন পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবার খামারিরা আশানুরূপ দামে পশু বিক্রি করে লাভবান হতে পারবে ন।

এদিকে কুরবানিতে গরু-ছাগলের পাশাপাশি মহিষেরও উল্লেখযোগ্য চাহিদা রয়েছে। জেলার সবচেয়ে বেশি মহিষের খামার রয়েছে সোনাগাজী উপজেলায়। সোনাগাজী উপজেলার মহিষ খামারী আনোয়ার হোসেন টিপু জানান, এবার কুরবানি ঈদে বিক্রির জন্য ২০টির বেশি মহিষ প্রস্তুত করছি৷ প্রতিটি মহিষের গড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারনা করছেন তিনি৷

কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এ অঞ্চলে মহিষের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। বর্তমানে আমাদের খামারে ৬ শতাধিক মহিষ রয়েছে। কুরবানি ছাড়াও সারা বছরই মহিষের মাংসের চাহিদা থাকে বলে জানান তিনি।

সোনাগাজী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কল্লোল বড়ুয়া জানান, এ উপজেলায় গবাদিপশু চারণ ভূমির পরিমাণ বেশি হওয়ায় গরু-ছাগল ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে মহিষের লালন-পালন হয়ে থাকে। মহিষ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বংশ বিস্তারে সফলতা এসেছে। আসন্ন কুরবানির পশুর বড় একটি চাহিদা মেটাতে পারে মহিষ। এখানকার স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণ পরামর্শ ও বিভিন্ন সহযোগিতার মাধ্যমে কৃষক ও খামারিদের পাশে আছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

পুরাতন সংবাদ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১