২৬ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্তি হলো আজ। ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে বন্ড বাহিনীর হামলায় নিহত হন শাহ্ নেওয়াজ রিফাত শরীফ।
এ ঘটনায় নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত এ রায় দেন। রায় ঘোষণার পর থেকেই কারাগারে আছেন মিন্নি।
এদিকে বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার ৯ মাস পরও মিন্নিকে নির্দোষ দাবি করেছেন তার বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। শুক্রবার (২৫ জুন) নিজ বাড়িতে কাছে এ দাবি করেন তিনি।
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, মিন্নিকে যে দোষী সাব্যস্ত করা হলো, ওকে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত করা হলো, এটা অন্যায়ভাবে করা হয়েছে। মিন্নি কোনোভাবেই দোষী না এবং ও (মিন্নি) কোনো পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলো না। এটা কেউ প্রমাণও করতে পারেনি। কুচক্রী মহল মিন্নিকে এই মামলায় জড়িয়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত করেছে। মিন্নিও আমার কাছে বলেছে, ‘আব্বু আমি দোষী না। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। উচ্চ আদালতে আমি বেকসুর খালাস পাব। সত্যের জয় একদিন হবেই।’
তিনি বলেন, আদালত রায়ে উল্লেখ করেছে- মিন্নি এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী। কিন্তু মিন্নি কোথায় পরিকল্পনা করেছে? পরিকল্পনা যারা করেছে তারা কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু এসবের সঙ্গেতো মিন্নি ছিল না। মিন্নি যদি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকত বা কোনোভাবেই এটা জানতে পারত তাহলে কখনোই ওই দিন কলেজে যেত না।
মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, মৃত্যুর আগে রিফাত তার বাবার কাছে হামলাকারীদের নাম বলেছে এবং মামলায় মিন্নিকে সাক্ষী করতে বলেছে। রিফাতের কথা অনুযায়ী তার বাবা মামলা দায়ের করেছেন এবং মামলার এজাহারে এসব কথা স্পষ্টভাবে লেখা আছে।
এছাড়াও রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ যে সাক্ষী দিয়েছেন তাতেও এসব কথা উঠে এসেছে। পরবর্তীতে পুলিশ প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের সাক্ষী উপস্থাপন করে মিন্নিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। মিন্নি আসলেই নির্দোষ। তাই আমি দৃঢ় আশাবাদী- আল্লাহর রহমতে উচ্চ আদালতে আমরা সুফল পাব। এছাড়া আমার জামাইও কোনো অন্যায় করেনি। সেও নির্দোষ ছিলো। আল্লাহর রহমতে মিন্নি আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেই।
মিন্নির শারীরিক অবস্থা নিয়ে মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, মিন্নির দাঁতে ব্যথা ও মাথা ব্যথাসহ অন্যান্য অনেক উপসর্গ আছে। মিন্নি খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। সব সময় অসুস্থ থাকে। তাই খুবই দুর্বল হয়ে গেছে। কারাগারের পানি পর্যন্ত ওর সঙ্গে অ্যাডজাস্ট হয় না। মিন্নির চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ আবেদন অনুমোদিত হলে মিন্নিকে বাহিরে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কারণে মিন্নিকে চেনা এখন দুষ্কর ব্যাপার। মিন্নি কোনদিন কোনো অভাব দেখেনি। ওর খাওয়ার অভাব ছিলো না, পরার অভাব ছিলো না, কোনো শূন্যতাও ছিলো না। মিন্নিকে আমি কলেজে নিয়ে যেতাম আবার কলেজ থেকে নিয়ে আসতাম। কেউ বলতে পারবে না- কোনোদিন মিন্নি একা বাহিরে বের হয়েছে। মিন্নি আজ মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন থেকে দূরে। ওকে (মিন্নিকে) কারাগারের সেলে আবদ্ধ থাকতে হয়। তাই খুব কষ্টে জীবনযাপন করছে মিন্নি।
রিফাত হত্যা মামলার রায়ের পর গত বছরের ২৯ অক্টোবর বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মিন্নিকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে এ কারাগারেই রয়েছেন তিনি। করোনার কারণে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় প্রতি সপ্তাহে একবার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান মিন্নি।
মিন্নির অসুস্থতা ও চিকিৎসার বিষয়ে জানতে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুনের ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।