৩০ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
বরিশালের হিজলায় ধর্ষণের শিকার এক গৃহবধূকে (৪৫) শিকলে বাধা অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৯ জুন) রাত ১২টার দিকে নির্যাতিতা গৃহবধূকে উদ্ধার করা হয়।
নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ বুধবার সকালে (৩০ জুন) সকালে একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান তালুকদারের ভাতিজা আলমগীর তালুকদারের ছেলে সোহেল তালুকদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, সোহেল তালুকদার যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে কোনো পদ-পদবিতে নেই। তারপরও নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে রেখেছেন তিনি। সোহেল তালুকদার বিবাহিত। তার দুটি সন্তান রয়েছে।
গৃহবধূর স্বজনরা জানান, গত জানুয়ারি মাসে ভিজিডি ও রেশন কার্ডের তালিকা করতে চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের গ্রামে যান সোহেল তালুকদার। অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় গৃহবধূ সোহেল তালুকদারকে সরকারি ভিজিডি ও রেশন কার্ড করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এসময় ওই গৃহবধূ গ্রামের আরও কয়েকটি পরিবারের কার্ডের জন্য বলেন। সোহেল তালুকদার ১০ জনকে রেশন কার্ড ও ১০ জনকে ভিজিডি কার্ড করে দেয়ার জন্য লক্ষাধিক টাকা দাবি করেন। পরে অন্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ২০ টি সরকারি কার্ডের জন্য সোহেল তালুকদারকে নগদ ২০ হাজার টাকা দেন। এছাড়া গৃহবধূ তার কার্ড করে দেয়ার জন্য একটি স্বর্ণের চেইন ও আংটি সোহেল তালুকদারকে দেন। এসব কারণে গৃহবধূর বাড়িতে প্রায় আসতেন সোহেল তালুকদার। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
কার্ড দেয়ার কথা বলে ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সোহেল তালুকদার ওই গৃহবধূকে কখনো উপজেলা সদরে কখনো বরিশালে নিয়ে যেতেন। সেখানে তাকে ধর্ষণ করেন সোহেল তালুকদার। তাছাড়া স্বামী ও বাবার বাড়িতে একা পেয়ে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করেন সোহেল তালুকদার। এদিকে কার্ডের জন্য টাকা দেয়া পরিবারগুলো ওই গৃহবধূকে চাপ দিলে তিনি সোহেল তালুকদার বলেন। এরপর থেকে তাকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেন সোহেল তালুকদার। গত ২৭ জুন গৃহবধূ বিয়ের দাবিতে ও কার্ডের টাকা ফেরত চাইতে সোহেলের বাড়িতে যান। সোহেল গৃহবধূকে দেখে পালিয়ে যান। তবে সোহেলের পরিবারের সদস্যরা তাকে মারধর করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।
ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সোহেলের পরিবার ওই গৃহবধূর ভাইকে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখান। তারা মামলা বা কারো কাছে অভিযোগ করলে মারধর করে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন এবং ওই গৃহবধূকে বাড়িতে আটকে রাখার নির্দেশ দেন।
ওই গৃহবধূর ভাই জানান, শুধু আমাদের গ্রামে নয়, পুরো ইউনিয়নে সোহেল তালুকদারের প্রভাব রয়েছে। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাছাড়া চেয়ারম্যানের আপন ভাতিজা হন। গ্রামে তার বিরুদ্ধে গিয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তারা এমন কোনো কাজ নেই করতে পারে না। এ কারণে বাড়িতে আমার বোনকে আটকে রেখেছিলাম। মঙ্গলবার (২৯ জুন) সকালে সবার অগোচরে আমার বোন বাড়ি থেকে পালিয়ে সোহেল তালুকদারের বাড়িতে ওঠেন। সেখানে তাকে মারধর করে আটকে রেখে আমাকে ডেকে নেন। পরে তাদের হুমকির কারণে তাকে বাড়িতে এনে শিকল দিয়ে আটকে রাখি। তবে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়।
হিজলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অসীম কুমার সিকদার বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এছাড়াও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ওই গৃহবধূকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।