২ ডিসেম্বর ২০২০, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
অর্থপাচারকারীরা যত বড়ই রুই-কাতলা হোক না কেন তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট। দুই মাসেও পিকে হালদারের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) মামলার শুনানিকালে দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘অর্থপাচারকারীরা যত বড়ই রুই-কাতলা হোক না কেন তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান যে লক্ষ্যে দেশকে স্বাধীন করেছেন তার সে স্বপ্ন বাস্তাবায়নে কাজ করা আমাদের সবার দায়িত্ব-কর্তব্য। সে লক্ষ্যে আপনারা কাজ করুন। সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
পরে আদালত তার আদেশে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে করা এজাহারের ফটোকপি এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আবেদনের কপি দাখিলের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে দুদককে এসব তথ্য-উপাত্ত আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়ে সেদিন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন করেছিল আইএলএফএসএল। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত জানিয়েছিলেন- পিকে হালদার কবে, কখন, কীভাবে দেশে ফিরতে চান তা আইএলএফএসএল লিখিতভাবে জানালে সে বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে। পিকে হালদারের দেশে ফেরার বিষয়ে গত ২০ অক্টোবর হাইকোর্টকে জানায়।
পিকে হালদারের প্রতিষ্ঠান আইএলএফএসএল’র পক্ষ থেকে হাইকোর্টকে জানানো হয়, ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা আসার জন্য টিকিট কেটেছেন। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।
সার্বিক বিবেচনায় প্রশান্ত কুমার (পিকে হালদার) হালদারকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পিকে হালদার দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের আইজি এবং ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি কারাগারে থাকাবস্থায় পিকে হালদার যেন অর্থ পরিশোধের সুযোগ পান সে বিষয়ে সুযোগ দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে আর তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দেশে ফেরেননি।
বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে থাকা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার করতে আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা ইন্টারপোটেল সহযোগিতা চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এদিকে দুদক সূত্রে জানা গেছে, পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। আত্মসাৎ করা অর্থের মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকা গত ১০ আগস্ট দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাবে এসব অর্থের লেনদেন হয়েছে।
এর আগে গত ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলার এজাহারে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা পাচারেরও অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।