০৪ জানুয়ারী ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করে কানাডায় পলাতক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত শংখ বেপারীকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (৪ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে দুদক কার্যালয়ে হাজির হলে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দেড়টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় সংস্থাটির সচিব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। শংখ বেপারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাউদ্দিন।
দুদক সচিব বলেন, শংখ বেপারী পিকে হালদারের সহযোগী। তার মাধ্যমে পিকে হালদার অবৈধ অর্থ বিভিন্ন জায়গায় নিয়েছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, পিকে হালদারের সম্পদ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দিকে গেছে। সেখানে তিনি সহায়তা করেছেন। এছাড়া তার দখলে ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে। যেটা পিকে হালদারের অর্থে ক্রয় করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। পিকে হালদারের অর্জিত অর্থ এখন তার কাছে আছে সেই প্রমাণও পাওয়া গেছে।
এর আগে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি পি কে হালদারের টাকার খোঁজে তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী শংখ বেপারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে সেগুনবাগিচা দুদক কার্যলয়ে শুরু হয় তার জিজ্ঞাসাবাদ।
গত ২৯ ডিসেম্বর প্রশান্ত কুমার হালদারের স্থাবর সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রাজধানীতে ধানমণ্ডির দুটি ফ্ল্যাটসহ পিকে হালদারের স্থাবর সম্পদগুলো ক্রোকের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন এ আবেদন করেন।
আদালতে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আবেদনের শুনানি করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।
রোববার আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে কানাডায় অবস্থানরত প্রশান্ত কুমার হালদারের পাঁচটি ঠিকানা উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রশান্ত কুমার হালদার অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। পরে মানি লন্ডারিং আইনে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি মামলা করে দুদক।
এতে আরো বলা হয়, বিদেশে পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদক থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলকে অনুরোধ করা হয়। পরে ইন্টারপোল থেকে কতিপয় তথ্যাদি সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়। ইতিমধ্যে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া আসামি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে রেড এলার্ট নোটিশ জারির নিমিত্তে মামলার এফআইআর এর নোটারিকৃত ইংরেজি কপি ও পূরণকৃত রেড নোটিশ ড্রাফট ফর্মসহ সম্ভাব্য দেশগুলোদে তার অবস্থান তথ্যাদি প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ থেকে চাওয়া তথ্যাদি ইতিমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলা তদন্তকালে বিভিন্ন গোপন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, অবন্তিকা বড়াল ও শংখ বেপারী নামে দুই ব্যক্তির নামে-বেনামে প্রশান্ত কুমার হালদার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন।
এতে আরো বলা হয়, তদন্তকালে মামলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দলিলপত্র, ব্যাংক হিসাব বিবরণী ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। তাছাড়া আদালতের অনুমোদনক্রমে পি কে হালদারের নিজ নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির নামে অর্জিত প্রায় ৪৩ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৫৮টি ব্যাংক হিসাব ও ১৭টি কোম্পানির শেয়ার হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। মামলা সংশ্লিষ্ট আরো রেকর্ডপত্র সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।