১৭ মে,২০২১,আজকের মেঘনা ডটকম, ডেস্ক রিপোর্ট :
গাজায় ইসরাইলি বর্বর হামলা দ্বিতীয় সপ্তায় গড়ালো। এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় দুশ ফিলিস্তিনি। তাদের মধ্যে অর্ধ-শতাধিক শিশু। হামলা শুরুর পর রোববার দিনটি ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। এদিন অন্তত ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আরো বেশি সংঘাত হলে ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণহীন সংকট তৈরি হবে। তিনি এমন ভয়ঙ্কর সহিংসতার জরুরি ভিত্তিতে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবিসির এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোববার মধ্যরাতের পর পরই গাজার একটি ব্যস্ত সড়কে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইল। এতে অন্তত তিনটি ভবন ধসে পড়ে এবং অনেকে নিহত হয়।
এরপর প্রায় সারা রাত ধরে এবং বিকেলে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলকে লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে হামাস।
সাইরেন বাজার সাথে সাথে লাখ লাখ ইসরাইলি নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন।
ফিলিস্তিনিরাও সতর্কতা অবলম্বন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জনবহুল এবং দরিদ্র গাজা উপত্যকার অনেক বাসিন্দার আসলে যাওয়ার মতো তেমন কোন নিরাপদ আশ্রয় ছিল না।
রিয়াদ এশকুনতানা নামে একজন ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, তিনি তার মেয়েদেরকে বাড়ির এমন একটি ঘরে ঘুম পাড়িয়েছিলেন যেটি বিস্ফোরণের স্থান থেকে সবচেয়ে দূরে বলে তিনি মনে করেছিলেন। তবে ওই রাতের পর তার মেয়েদের মধ্যে শুধু একজন বেঁচেছিলেন। যার নাম ছিল সুজি। তার বয়স মাত্র ৬ বছর। তার স্ত্রী এবং আরো তিন সন্তান মারা যায়।
মি. এশকুনতানা বলেন, মেয়েরা বেঁচে আছে কিনা তা দেখতে ছুটে যাই আমি। আমার স্ত্রী লাফিয়ে পড়ে মেয়েদের জড়িয়ে ধরে ঘরের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিল। আর তখনই ঘরটিতে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে… ছাদ ধসে পড়ে আর আমি ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ি। গাজার উদ্ধার কর্মীরা হামলার পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে দিনভর চেষ্টা চালিয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নিহতদের মধ্যে ডা. আয়মান আবু আল-আউফ নামে একজন চিকিৎসকও রয়েছেন। তিনি শিয়া হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগের প্রধান এবং করোনাভাইরাস টিমের সদস্য ছিলেন। ইসরায়েলে হামাসের ছোড়া রকেট মধ্য এবং দক্ষিণ ইসরাইলের আশকেলন, আশদদ, নেটিভটসহ অন্যান্য এলাকায় আঘাত হানে। তবে হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
জাতিসংঘের বৈঠকে কী ঘটেছিল?
সম্প্রতি জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা কাউন্সিল বৈঠকে বসলেও আনুষ্ঠানিক কোন বিবৃতিতে সম্মত হতে পারেনি এবং বৈঠকের পর কেউ এ নিয়ে মুখ খোলেনি।
ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসেনি। কারণ তারা মনে করছে যে এটি দুই দেশের কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
রোববারের বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, “সব পক্ষ যদি অস্ত্র-বিরতি চায়” তাহলে তাতে সমর্থনে প্রস্তুত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সংঘাত নিরসনে তারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি একটি শরণার্থী শিবিরে শনিবারের হামলায় একই পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হওয়া এবং ৫ মাস বয়সী একটি মাত্র শিশুর বেঁচে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ইসরাইল সবসময় আমাদেরকে বলে যে আমরা যাতে তাদের জুতোয় পা রেখে দেখি, কিন্তু তারা তো কোন জুতো পরেনি, তারা মিলিটারি বুট পরে রেখেছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের স্থায়ী প্রতিনিধি গিলাদ এরদান, হামাসের হাতে নিহত ১০ বছর বয়সী এক আরব-ইসরাইলি মেয়ে শিশুর ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়ে দাবি করেন যে, ইসরাইল ‘সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো ভেঙে এবং বেসামরিক প্রাণহানি না করেথ তারা আসলে ‘বীরোচিত
কাজ করছে।
মি. এরদান নিরাপত্তা কাউন্সিলকে কঠোর ভাষায় হামাসের নিন্দা করার আহ্বান জানান। তবে ইসরাইল হুঁশিয়ার করে বলেছে, নিজেদের সুরক্ষায় তারা সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।সূত্র :
মানবজমিন