১৬ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
প্রায় ৩ বছর বিনা অপরাধে সাজাভোগের পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মিনু। বুধবার (১৬ জুন) বিকেল ৪টায় কারাগার থেকে বের হয়েছেন মিনু।
মিনুকে বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা দেয়া আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, হাইকোর্ট ৭ জুন মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দেয়। একই সময়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেয় আদালত। তদন্ত শেষে প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রতিবেদন জমা দিলে তার ভিত্তিতে মিনুকে মুক্তির জন্য আদালতে মিনুর আইনজীবীকে বন্ড দিতে বলা হয়।
মুক্তি পাওয়ার পর জেলগেটে মিনু জানান, মর্জিনা তাকে ইফতারি, চাল, ডাল এসব দিবে বলে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। কুলসুম নাম ডাকলে তাকে হাত তুলতে বলেন। পরে তাকে একটা জায়গায় নিয়ে যান। তার নাম ডাকলে হাত তোলেন। পরে তাকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি তাদের বলছি আমি কুলসুম না, আমার নাম মিনু। কেউ শুনেনি। আমি তাদের বিচার চাই। বাঁচতে চাই।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় কোহিনুর আক্তার ওরফে বেবী নামে এক নারী খুন হন। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি খুনের মামলা করা হয়।
ওই মামলায় কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমী নামে এক নারী গ্রেপ্তার হন।
২০০৮ সালে এ মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কুলসুম আক্তার জামিন পান। এ মামলায় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত কুলসুমকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
রায়ের দিন আসামি কুলসুম আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর ২০১৮ সালের ১২ জুন মিনু নামের এক নারীকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার সাজিয়ে আত্মসমর্পণ করানো হয়। তখন আদালত মিনুকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়।
২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল কুলসুম আক্তার হাইকোর্টে আপিল করেন। সেই সঙ্গে জামিনের আবেদনও করেন।
চলতি বছরের ২১ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে পাঠানো আসামি প্রকৃত সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার।
এ আবেদনের শুনানি শেষে আদালত কারাগারে থাকা মিনুকে আদালতে হাজির করে তার জবানবন্দি নেয়। তখন তিনি জানান, তার নাম মিনু, তিনি কুলসুম নন।
মিনু বলেন, মর্জিনা নামের এক নারী তাকে চাল, ডাল দেবে বলে জেলে ঢোকান। প্রকৃত আসামি কুলসুম আক্তারকে তিনি চেনেন না।
আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারগুলো দেখে হাজতি আসামি কুলসুমী ও সাজা ভোগকারী আসামির চেহারায় অমিল খুঁজে পান। তখন আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারসহ একটি উপনথি হাইকোর্ট বিভাগে আপিল নথির সঙ্গে সংযুক্তির জন্য পাঠিয়ে দেয়।
পরে হাইকোর্ট গত ৭ জুন নিরপরাধ মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দেয়।