• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন

আবার রিমান্ডে নিলে মনে হয় না আর বাঁচবো, বিচারককে নাসির

ডেস্ক রিপোর্ট / ২২৫ বার পঠিত
আপডেট টাইম : বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১

২৩ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলায় বুধবার নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড শুনানির আগে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। দুপক্ষের শুনানি শেষ হলে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা নাসির উদ্দিন বিচারককে রিমান্ড আদেশ না দেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘এখন আবার আমাকে রিমান্ডে পাঠানো হলে মনে হয় না আর বাঁচবো।’

ঢাকা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাজিব হাসান ওই দুই আসামির রিমান্ডের আদেশ দেন। আদেশের আগে বিচারকের উদ্দেশে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমার বয়স ৬৫। এজমাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছি। গত ৯ দিন ডিবির রিমান্ডে ছিলাম। এখন আবার আমাকে রিমান্ডে পাঠানো হলে মনে হয় না আর বাঁচবো।’

রিমান্ডে না নিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুরোধ জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্র থেকে রাজনীতি করে আসছি। আমি একজন সমাজসেবক। তা ছাড়া আমি উত্তরা ক্লাবের সভাপতি ছিলাম। সাভার বোট ক্লাবের সদস্য। বোট ক্লাব ভবন নির্মাণে আমিসহ কয়েকজন অবদান রেখেছি। এর আগে আমার বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ নাই। আমি কোনো ঝামেলায় ছিলাম না। দয়া করে রিমান্ড না দিয়ে আমাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।’ এরপর আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বিমানবন্দর থানার মাদক মামলায় নাসির উদ্দিন এবং অমির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওই রিমান্ড শেষে তাদের বুধবার আদালতে হাজির করা হলে পরীমনির ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার পরিদর্শক মো. কামাল হোসেন তাদের ১০ দিন রিমান্ড আবেদন করেন।

বুধবার বিকেল ৪টা ২৯ মিনিটের দিকে নাসির ও অমিকে এজলাসে তোলা হয়। সাড়ে চারটার দিকে রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। প্রথমে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানিতে বলেন, ‘পরীমনি প্রথম শ্রেণির একজন অভিনেত্রী। গত ৯ জুন তাকে এই দুই আসামিসহ অন্যরা মারধর করে। পরিশেষে তাকে মদ পান করায়। কেন মদ পান করাল, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ছিল কি না জানার জন্য রিমান্ডের প্রয়োজন।’

এরপর ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ হেমায়েত হোসেন ও অতিরিক্তি পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানিতে বলেন, ‘এজাহারে এই দুইজনের নাম আছে। ঘটনার সঙ্গে আরও অজ্ঞাতনামারা জড়িত আছে। তাদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। আর আসামিরা এ অপরাধ থেকে মুক্তি পেলে সমাজে এ ধরনের অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। সমাজকে এ ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত করতে তাদের বিচার হওয়া জরুরি। সেলিব্রেটি না হয়ে পরীমনি একজন সাধারণ নারী হিসেবে ন্যায়বিচার পাবে না। মামলার দিকে দেশ, জাতি তাকিয়ে আছে। তাকে যখন সেলিব্রেটি বলা হলো তখন হু, হা করার কি আছে। আশা করব, পুলিশ যে রিমান্ড আবেদন করেছে তা আদালত মঞ্জুর করবেন।’

অন্যদিকে নাসির উদ্দিন ও অমির পক্ষে ঢাকা বারের সভাপতি আব্দুল বাতেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মামুনসহ কয়েকজন রিমান্ড বাতিল চান। ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কথা খাই না’- এ কথা দিয়েই শুরু করেন মিজানুর রহমান মামুন। সেলিব্রেটি হলেই আমাকে রাত ১২ টার পর ক্লাবে যেতে হবে এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এরকম হলে তো আরও অনেক কিছুই হতে পারে। ধর্ষণ বা হত্যাচেষ্টার মামলা হলে তো ডিএনএ, ফরেনসিক টেস্ট করা দরকার। আসামিদের সিমটোম নিক তারা চেষ্টা করেছেন কি না। তা ছাড়া যারা আসামি তারা কি কম সেলিব্রেটি। পরীমনি সেলিব্রেটি ভালো কথা, উনার জায়গায় উনি থাকুক। আমরা (আসামিরা) মানকের চিপায় পড়ে গেছি। মিডিয়া ট্রায়াল। এর রেজাল্ট কি হবে আমরা জানি।’

মিজানুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বনানীর একটি ক্লাবে গিয়ে ভাঙচুর করেছেন পরীমনি। সেলিব্রেটি হয়ে অন্যদের ভিকটিমাইজড করছেন পরীমনি। নাসির উদ্দিন এবং অমিও ভিকটিমাইজড।’

আবদুল বাতেন বলেন, ‘পরীমনি বাসা থেকে রওনা দিছেন স্বেচ্ছায়। ১২টার পর তো ক্লাব বন্ধ হয়ে যায়। আর নাসির কেন তাকে রেপ করতে যাবেন। এজাহারে অমির বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য নাই। কেন তাকে রিমান্ডে পাঠাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাবানা, ববিতা, রোজিনাও নায়িকা ছিলেন। তাদের আমরা শ্রদ্ধা করি। তারা কোনো ক্লাবে যাননি। তিনি কেন রাত ১২টার পর ক্লাবে যাবেন। আসামিরা ভালো মানুষ। বিপদে পড়ে গেছেন। হয়রানি করতে মামলা দেওয়া হয়েছে। রিমান্ড বাতিল চেয়ে তাদের জামিন চাচ্ছি।’

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ১৫ জুন বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় নাসির উদ্দিন এবং অমির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ১৪ জুন দুপুরে সাভার থানায় পরীমনি মামলাটি দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর অভিযানে নামে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওইদিনই নাসির উদ্দিনসহ পাঁচজনকে উত্তরার একটি বাসা থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। অভিযানে ওই বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ ও ইয়াবা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ডিবির গুলশান জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার শিকদার বাদী হয়ে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

পুরাতন সংবাদ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১