০৬ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
লক্ষ্যের দিকে যতো এগিয়ে যাচ্ছে, যুদ্ধের ডামাডোল ততো তীব্র হচ্ছে। কোন দল উঠছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে? ইতালি নাকি স্পেন? আভাস দিচ্ছে, সহজ প্রশ্নের উত্তর মিলবে কঠিন লড়াইয়ের পর। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম সাক্ষী হতে যাচ্ছে আরেকটি ঐতিহাসিক ম্যাচের।
ইউরো ২০২০-এর প্রথম সেমিফাইনালে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ইতালি ও স্পেন। সরাসরি সম্প্রচার করবে সনি টেন ও সনি সিক্স।
ফুটবল মাঠে ইতালির সঙ্গে স্পেনের শত্রুতা ঐতিহাসিক। ১৯৩৪ বিশ্বকাপে এই দুই দলের লড়াইয়ে জিতেছিলো ইতালি। ৬০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে তাদের ম্যাচটি রীতিমতো মল্লযুদ্ধে পরিণত হয়েছিলো। নতুন সহস্রাব্দে এই শত্রুতা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।
২০০৮ সালে ইতালিকে হারিয়ে ইউরো জিতে বিশ্ব ফুটবলে স্প্যানিশ দাপটের চার বছরের বৃত্তের সূচনা হয়েছিলো। এরপর তারা বিশ্বকাপ ও আরেকটি ইউরো জিতেছিলো। কাকতালীয়ভাবে ইতালির হাতেই তাদের এই বৃত্তের পরিসমাপ্তি ঘটেছিলো।
ইতালির বিপক্ষে ম্যাচ মানেই স্পেন কোচ লুইস এনরিকের কাছে বাড়তি কিছু। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণেই তিনি সহ্য করতে পারেন না আজ্জুরিদের। সে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাওয়া ম্যাচে ইতালির মাউরো তাসেত্তির কনুইয়ের আঘাতে নাক ভেঙে গিয়েছিলো এনরিকের। তার রক্তাক্ত চেহারা এখনো অনেকের চোখে ভাসে। ওই ঘটনার জেরে মাঠে দু’দলের হাতাহাতি শুরু হয়ে গিয়েছিলো।
২০০৮ ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে জিতে ওই ঘটনার শোধ নিয়েছিলো স্পেন। ২০১২ ইউরোর ফাইনালেও ইতালিকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে তারা। পাঁচ বছর আগে ইউরোজয়ী স্পেনের গরিমা ধাক্কা খেয়েছিলো আবার ইতালিতে। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে ২-০ গোলে ইতালির কাছে হেরেছিলো তারা। সেই হারের শোধ তারা ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিয়েছিলো। ৩-০ গোলের ওই হারের কারণে ১৯৫৮ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে পারেনি ইতালি।
ওই ব্যর্থতার পরই রবার্তো মানচিনির হাতে তুলে দেওয়া হয় ইতালির দায়িত্ব। ৫৬ বছর বয়সী এই কোচের হাতে যেন ইতালির ফুটবলের নবজাগরণ হয়েছে। আক্রমণাত্মক ফুটবলে তারা কেবল প্রতিপক্ষকে নাজেহালই করছে না, কোটি ভক্তের মনও জিতে নিয়েছে। টানা ৩২ ম্যাচ অপরাজিত থেকে নতুন রেকর্ড গড়েছে মানচিনির দল। এর মধ্যে শেষ ম্যাচে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল বেলজিয়ামকে হারিয়ে দিয়ে শিরোপার অন্যতম দাবিদার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে আজ্জুরিরা।
ইউরোয় স্পেনের শুরুটা হয়েছিলো সমালোচনার তীরে। প্রথম দুই ম্যাচই ড্র। গোল স্রেফ একটি। দৃষ্টিকটু রকমের ধারহীন ফুটবল। গ্রুপ পর্ব উতরানোই কঠিন। সেই দলটিই পরের দুই ম্যাচে স্লোভাকিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার জালে পাঁচবার করো ১০ বার বল পাঠিয়েছে। শেষ ষোলোতে ক্রোয়েশিয়াকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল দলটি।
শেষ আটে সুইজারল্যান্ড বাধা পার হওয়া একটু কঠিনই ছিলো। ১২০ মিনিটের খেলা যখন ১-১ গোলে ড্র, পেনাল্টি শুটআউট তখন ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণের দায়িত্ব নেয়। টাইব্রেকারে স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমনের বীরত্বে ৩-১ গোলে জিতে সেমিফাইনালে ওঠে দ্য রেড ফিউরি।
ইউরো কাপ ও বিশ্বকাপে স্পেনের বিরুদ্ধে ইতালির রেকর্ড ঈর্ষণীয়। ২০১৬ সালের ইউরোয় শেষ ষোলোতে ২-০ গোলে স্পেনকে হারিয়েছিলো ইতালি। ইউরো কাপ ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে ৯ বার দু’দল মুখোমুখি হয়েছে। তার মধ্যে চার ম্যাচ জিতেছে ইতালি। মাত্র একবারই তাদের হারিয়েছে স্পেন। চারটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। এবারের সেমিফাইনাল ইউরো ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে দু’দলের দশম সাক্ষাৎ।
ইতালি-স্পেন ১৯২০ সালে প্রথমবার একে অপরের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো। ২-০ গোলে শুরুর জয়টা ছিলো স্পেনের। সেই থেকে এই পর্যন্ত সর্বমোট ৩৭ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দল দু’টি। ঊনিশ-বিশের মতোই ফলাফল। স্পেন জিতেছে ১৩ ম্যাচে, ১১ ম্যাচ জিতেছে ইতালি। বাকি ১৩ ম্যাচ ড্র হয়েছে।
শেষ ২০১৭ সালে ইউরোপের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে দেখা হয়েছিলো রেড ফিউরি ও আজ্জুরিদের। সে ম্যাচটিও ৩-০ তে জিতেছিলো স্প্যানিশরা। দু’দলের শেষ পাঁচ দেখায় দু’টিতে জেতে স্পেন, একটিতে ইতালি এবাং দুই ম্যাচ হয় ১-১ গোলে ড্র।
রবের্ত মানচিনির ইতালির দোন্নারুম্মা গোল পোস্টের নিচে দারুণভাবে স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। লরেঞ্জো, কিয়েল্লিনি, বোনুচ্চি ও এমারসন থাকবেন রক্ষণ আগলে। জর্জিনহো, বারেল্লা, বেররাত্তি মাঝমাঠে আজ্জুরিদের আস্থা। কিয়েসা, ইমোবিলে, বেরার্দি ও ফর্মের তুঙ্গে থাকা ইনসাইনে সামলাবেন আক্রমণভাগ।
লুইস এনরিকের গোলপোস্টের নায়ক সিমনেই আস্থা। অ্যাজলেপেকুইতা, লাপোর্তে, তোরেস ও আলবা ডিফেন্স সামাল দেবেন। কোকে, বুসকেট ও পেদ্রি থাকবেন মিডফিল্ডের দায়িত্বে। ফেরান তোরেস, মোরাতা, ওলমো ও মোরেনোরা অ্যাটাকিংয়ে।