• বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন

ফ্রান্সে ভারতের সম্পত্তির দখল নিলো তেল কোম্পানি কেয়ার্ন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক / ১৮৮ বার পঠিত
আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১

০৯ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক গ্যাস ও জ্বালানি কোম্পানি কেয়ার্ন এনার্জি ভারতের কাছে তাদের বকেয়া ১৭০ কোটি ডলার আদায় করতে ভারত সরকারের বেশ কিছু সম্পত্তির দখল নিয়েছে।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে বৃহস্পতিবার ২০টি ভারতীয় সম্পত্তির দখল নেয়া ছাড়াও কেয়ার্ন যুক্তরাষ্ট্রে এয়ার ইন্ডিয়ার দখল নিতে মামলাও করেছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারত সরকারের সম্পত্তির হদিশ করছে।

সংস্থাটি বিবিসিকে জানিয়েছে, ভারত সরকার তাদের ওপরে যে অনায্যভাবে বাড়তি কর চাপিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে দু’পক্ষ‌ই আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে গিয়েছিলো। ওই সালিশি আদালতের নির্দেশ তাদের পক্ষে গেছে। সেজন্যই তারা বকেয়া আদায়ের কাজ শুরু করেছে। তবে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, কোনো ফরাসি আদালতের কাছ থেকে এধরণের কোনো নির্দেশ তারা পায়নি।

কেয়ার্ন এনার্জি বলছে, গত বছর ডিসেম্বরে দ্যা হেগ-এর আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত সর্বসম্মতভাবে তাদের পক্ষেই রায় দিয়ে বলেছিলো যে ভারত সরকারকে বকেয়া ১৭০ কোটি ডলার ফিরিয়ে দিতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে সুদ।

ওই রায় তারা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের আদালতে কার্যকর করার আবেদন করেছিলো।

ফ্রান্সের আদালতটি প্যারিসে ভারতীয় সম্পত্তিগুলি দখল নেয়ার নির্দেশ কার্যকরী করতে অনুমোদন দেয় কেয়ার্নকে। তারপরেই ২০টি ভারতীয় সম্পত্তির দখল নিয়েছে বলে কেয়ার্ন বিবিসিকে জানিয়েছে।

কেয়ার্ন এনার্জির ডিরেক্টর, গ্রুপ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ডেভিড নিসবেট বিবিসিকে ব্যাখ্যা করছিলেন, সালিশি আদালতের রায়ের পরে সাড়ে ছয় মাস কেটে গেলেও ভারত বকেয়া না মেটানোর ফলেই তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

নিসবেটের কথায়, আদালতের নির্দেশ আমাদের পক্ষে যাওয়ার পরে সাড়ে ছয় মাস কেটে গেছে, এর মধ্যে দিল্লিতে দু’বার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ভারতের দিক থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি যে বকেয়া অর্থ তারা দেবে কী না।

শেয়ার হোল্ডারদের অধিকার আমাদের রক্ষা করতেই হবে। আন্তর্জাতিক শেয়ার হোল্ডাররা সাড়ে সাত বছর ধরে এটার জন্য অপেক্ষা করে আছেন, বলছিলেন ডেভিড নিসবেট।

ভারত কেয়ার্ন দ্বন্দ্ব যেভাবে শুরু

ভারত সরকার আর কেয়ার্নের এই দ্বন্দ্বের শুরু প্রায় ১৫ বছর আগে। তারও বছর পাঁচেক আগে কেয়ার্ন রাজস্থানে বড়সড় তেলের খনি আবিষ্কার করে। এরপর ২০০৬-০৭ সালে কেয়ার্ন ইউকে তাদের শেয়ার কেয়ার্ন ইন্ডিয়া সংস্থার কাছে হস্তান্তর করে এবং ২০১১ সালে কেয়ার্ন ভারত থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে ভেদান্তার কাছে তাদের সংস্থা বিক্রি করে দেয়।

সেই সময়েই ভারতের আয়কর বিভাগ এই প্রক্রিয়াতে বাধা দেয় এবং তখনো অবশিষ্ট দশ শতাংশ শেয়ার ভেদান্তার কাছে হস্তান্তরের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

রেট্রস্পেকটিভ ট্যাক্স ব্যবস্থা কী?

রেট্রস্পেকটিভ ট্যাক্স ব্যবস্থা চালু হয় ২০১২ সালে আর সেই আইন অনুযায়ীই কেয়ার্নকে কর দিতে হয়। ভারতের ওই রেট্রস্পেকটিভ ট্যাক্স ব্যবস্থা আসলে কী, তার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন শিল্প বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক কুনাল বোস।

তার কথায়, আমাদের সরকার একটা ব্যবস্থা চালু করে যেখানে পুরোনো হিসাবপত্র বার করে আগেকার আয় বা লাভের ওপরেও কর বসানো হয় নতুন হারে।

প্রণব মুখার্জী যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখনই এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিলো। কিন্তু সেসময়ে সরকারের মধ্যেও অনেকে এটা পছন্দ করেননি। আন্তর্জাতিক লগ্নী-কারীরা কোনও দেশে বিনিয়োগ করেন যেসব বিষয়ের ওপরে ভিত্তি করে, তার মধ্যে অন্যতম হল কর ব্যবস্থা।

এখন যদি বলা হয় যে পুরনো আয় বা লাভের ওপরেও নতুন হারে কর দিতে হবে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তারা তো ব্যবসা করতে চাইবে না। এটা যে কোনো দেশের বিনিয়োগের ওপরেই খারাপ প্রভাব ফেলবে, বলছিলেন কুনাল বোস।

আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত

কেয়ার্ন বলছে, ভারত তাদের কর ব্যবস্থা কীভাবে চালাবে, তা নিয়ে তাদের কোনও প্রশ্ন নেই। এই বিষয়ে ভারতের সার্বভৌমত্বও তারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে যে সালিশি আদালতে তারা গিয়েছিলেন, তার রায়কে মর্যাদা দিয়ে বকেয়া ফেরত দিক – এটাই চাইছে তারা।

ডেভিড নিসবেট বলছিলেন, আমরা বিশ্বের যে দেশেই কাজ করি, এটাই মেনেই নেওয়া হয় যে সেখানকার স্থানীয় সরকারের কর আদায় করার ব্যাপারে সম্পূর্ণ সার্বভৌমত্ব রয়েছে। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয় না। ভারতের ক্ষেত্রেও সেরকম কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি।

কিন্তু যে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে আমরা গিয়েছিলাম, সেখানে ভারতও তাদের একজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছিলো, প্রায় পাঁচ বছর ধরে সালিশি চলেছে। সর্বসম্মত রায় কেয়ার্নের পক্ষে গিয়েছিলো। এখন সেই রায়কে ভারত মর্যাদা দিক – এটাই একমাত্র কাম্য আমাদের, বলছিলেন ডেভিড নিসবেট।

ভারত সরকার কী বলছে?

প্যারিসে ভারতীয় সম্পত্তি দখল নেয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পরে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি জারি করেছে বৃহস্পতিবার। তারা বলেছে, “ফ্রান্সের কোনও আদালত থেকে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের নোটিস, নির্দেশ বা কোনো চিঠি আমরা পাইনি। ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে মার্চ মাসের ২২ তারিখ আপিল করেছে ভারত।

সর্বতোভাবে আইনি লড়াই চালাবে বলেও জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

তবে কুনাল বোস বলছিলেন, তিনি মনে করেন ভারতের উচিত কেয়ার্নের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যাটার সমাধান বের করাই বাঞ্ছনীয়।

আমার মনে হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত কেয়ার্নের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধান বার করা। এখনো সময় আছে।

কিন্তু দিল্লি যদি এটা না করতে চায়, তাহলে কেয়ার্ন এবার নানা দেশে ভারতের যেসব সম্পত্তি আছে, সেগুলোকে টার্গেট করবে। এর মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানগুলি যে তাদের মাথায় আছে, সেটা স্পষ্ট হচ্ছে, কুনাল বোস বলেন।

শুধু প্যারিসে ভারতীয় সম্পত্তির দখল নিয়েই যে কেয়ার্ন থেমে যাবে না, সেটা সংস্থাটি স্পষ্ট করেই বলছে।

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানগুলি দখল নেওয়া যেমন তাদের পরিকল্পনায় আছে, তেমনই যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে কয়েক হাজার কোটি ডলার মূল্যের ভারতীয় সম্পত্তি চিহ্নিত করেছে তারা যার মধ্যে আছে সরকারি তেল ও গ্যাস কোম্পানি, ব্যাঙ্ক ইত্যাদি। খবর: বিবিসি বাংলা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

পুরাতন সংবাদ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১