৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং, আজকের মেঘনা ডটকম,
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী নারায়ণপুর ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তের রহিমপুর এলাকার সীমানা থেকে তুষার খাঁ (৩৪) নামের বাংলাদেশি এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে শশীদল বিজিবি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মরদেহ উদ্ধার করে ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে শশীদল বিজিবি।
স্থানীয়রা জানান, সীমান্ত এলাকা থেকে তুষারকে বিএসএফ ধরে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করে গুরুতর আহত ও বিবস্ত্র করে মুমূর্ষু অবস্থায় সীমানায় ফেলে চলে যায়। নিহত তুষার খাঁ নওগাঁ জেলার রানীনগর এলাকার মোসলেম খাঁরের ছেলে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল এলাকায় তাঁর ফুফুর বাড়ি ।
স্থানীয়জনগণ ও বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী নারায়ণপুর (দক্ষিণপাড়া) এলাকায় বৃহস্পতিবার ভোরে মসজিদ থেকে ভারতীয় এক মুসল্লী ফজরের নামাজ আদায় করে বাড়িতে ফেরার পথে সীমান্তে এক অজ্ঞাত যুবককে গুরুতর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পায়। তখন বিষয়টি মসজিদের ইমামকে জানিয়ে ভারতে তাঁর বাড়ি চলে যান। পরে বিষয়টি স্থানীয় লোকজন জানতে পেরে বিজিবি সদস্যদের খবর দেয়। খবর পেয়ে শশীদল বিওপির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সীমানার ভারত অংশে ওই যুবককে গুরুতর অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন। পরে বিজিবি বার্তা পাঠালে বিএসএফ ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে অজ্ঞাত যুবক কোন দেশের নাগরিক তা নিশ্চিত করতে দফায় দফায় পতাকা বৈঠক হয়। শুক্রবার দুুপুর ১২ টায় গুরুতর অবস্থায় পড়ে থাকা অজ্ঞাত ওই যুবকের ফুফু আসমা বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করেন। ততক্ষণে ওই যুবক মারা যান বলে স্থানীয় লোকজন জানায়। এ সময় বিজিবি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে থানার পুলিশ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবককে মৃত দেখতে পান।
(০৯ সেপ্টেম্বর) ফুফু আসমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী কুমিল্লা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তুষার আমার স্বামীকে দেখতে বুধবার সকালে হাসপাতালে আসে। সেখান থেকে সকাল ১০টায় তুষার শশীদল এলাকায় আমাদের বাড়ির উদ্দেশে আসে। তারপর থেকে তুষারের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা উপজেলা শশীদল রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে তাঁকে খোজে পাইনি। পরে আজ সকালে ফেসবুকে ছবি দেখতে পেয়ে আমি হাসপাতাল থেকে দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে নিশ্চিত হই এটি আমার ভাইয়ের ছেলে তুষার এবং বিজিবিকে পরিচয় নিশ্চিত করি। তখন সে মারা যায়।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাক্তার কাজী তানভীর আবসাল বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা বিকেল পৌনে ৪টায় ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক পরীক্ষা করে তাঁকে মৃত পাই। আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।’
শশীদল বিওপির বিজিবি কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুল খালেক জানান, ‘আমরা সকাল ৬টায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি এবং দেখতে পাই ২০৫৮ মেইন পিলার থ্রিএস এবং ফোরএসের মাঝামাঝি বাংলাদেশের নারায়ণপুর দক্ষিণপাড়া থেকে ১০ ফুট ভারতের অভ্যন্তরে রহিমপুর এলাকায় মুমূর্ষু অবস্থায় এক যুবক অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওই ব্যক্তি ভারতের অভ্যন্তরে হওয়ায় এবং সে বাংলাদেশ নাকি ভারতের নাগরিক, বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় তাঁকে যথাসময়ে বাংলাদেশে আনতে পারি নাই। আহত যুবকটি ভারতীয় সীমান্তে, তাই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিএসএফ তাদের দেশে নিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি তারা। পরে আমরা যুবকের পরিচয় জানতে পেরে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পুলিশকে খবর দেই। খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আমরা সন্ধ্যায় যুবকের মরদেহ বাংলাদেশ সীমান্তে এনে থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।
ব্রাহ্মণপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ একরামুল হক বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে তাঁকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। এ সময় তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। পরে মৃতদেহটি বাংলাদেশ সীমান্তে এনে বিজিবি আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে আমরা থানায় নিয়ে আসি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, তুষারের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং নিহত ব্যক্তির পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষ হলে আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।