ডেস্ক রিপোর্ট।।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ, তাঁর স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম এবং তানভীরের ভায়রা ও গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদসহ ৯ জনকে ৩৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই মামলার অপর ৮ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম এই রায় দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের বিশেষ পিপি মীর আহমেদ আব্দুস সালাম বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন।
৩৭ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন—টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক, সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন বা রূপসী বাংলা শাখার সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান ও নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন। আদালত রায়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের দায়ে প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড (৩০ বছর) দেন। একই সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হয় প্রত্যেককে ৭ বছর কারাদণ্ড দেন। তবে উভয় সাজা একই সঙ্গে চলবে।
আদালত জেসমিন ও তানভীরকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছেন। অন্যদের দুই ধারায় ১২ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন।
আদালত সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম অফিসের জিএম ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, ডিএমডি মাইনুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সফিজউদ্দিন আহমেদ এবং এজিএম মো. কামরুল হোসেন খানকে অর্থ আত্মসাতের সহযোগিতা করার দায়ে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রতারণায় সহযোগিতার কারণে সাত বছরের কারাদণ্ড অর্থাৎ মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেন। দুটি ধারায় প্রত্যেককে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়া প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের সহযোগিতা করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকারকে মোট ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
আসামিদের মধ্যে তানভীর, জেসমিন, তুষার আহমেদ, আব্দুল মালেক, মাইনুল হক, সফিজউদ্দিন, কামরুল ও মহিদুরকে রায়ের আগে কারাগার থেকে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানাসহ তাদের আবার কারাগারে পাঠানো হয়। অন্য আসামিরা পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে সাজাও পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
এর আগে গত ১২ মার্চ যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের হিসেবে সুতা রপ্তানির নামে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের সুতা রপ্তানি করা হয় বলে নথিপত্রে দেখানো হয়। ওই হিসাবে পুরো অর্থ জমা করা হলে তা থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা হলমার্কের আরেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়, যা পরে তানভীর ও তার স্ত্রী তুলে নেন।
২০১২ সালের ৪ অক্টোবর প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক। ২০১৬ সালের ২৭ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
মামলাটি ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা
এই মামলার রায় আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, অত্র মামলা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করে, তারা জাতির শত্রু। তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত মর্মে আদালত মনে করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। এমতাবস্থায় অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো।
উল্লেখ্য, ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হলমার্কের ব্যবস্থা পরিচালকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আরও ১০টি মামলা ঢাকার বিভিন্ন আদালতে চলমান রয়েছে।