৮ জানুয়ারি ২০২০, আজকের মেঘনা ডটকম, ডেস্ক রিপোর্ট :
পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে দায়ের করা ওই মামলায় ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৭ সালের নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত। মামলার ৪৫ আসামী খালাস পান।
আজ বুধবার হাইকোর্ট ২৯ হাজার পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এ রায়টি প্রকাশ করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে রায়টি প্রকাশিত হয়নি।
২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ওই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুথটি মামলা দায়ের করা হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের পর মামলাটি হাইকোর্টে গেলে বিচারক ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৭ সালের নভেম্বরে রায় ঘোষণা করেন। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি হলেন মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারকে নিয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।
রায়ে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। খালাস দেয়া হয় ৪৫ জনকে। পিলখানার ঘটনাটিকে কলঙ্কজনক উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে আদালত সাত দফা সুপারিশ করেন।
আদালত রায়ে নিম্ন আদালতের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের ফাঁসি বহাল রাখেন। বাকি ১৩ জনের মধ্যে আট জনকে যাবজ্জীবন ও চার জনকে খালাস দেয়া হয়। বিচার চলাকালীন বাকি একজনের মৃত্যু হয়।
নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয় হাইকোর্টের রায়ে। বাকি ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনকে খালাস দেয়া হয়, বিচার চলাকালীন দুথজনের মৃত্যু হয়। নিম্ন আদালতের রায়ে ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিলো। তাদের মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, আট জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড, চার জনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। খালাস দেন ২৯ জনকে।
এ মামলায় নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছিলো। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট, ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রাখেন, বাকি চার জনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেন।
আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচার প্রক্রিয়ার দুথটি ধাপ শেষ হলো। এরপরের ধাপ হিসেবে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিলের সুযোগ।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুথটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও ২৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় আসামীর সংখ্যা হয় ৮৫০ জন। এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এর মধ্যে বিচার চলাকালীন বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামীর মৃত্যু হয়।
মামলার আসামীদের মধ্যে বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীকেও দণ্ড দেয়া হয়। সাজা ভোগকালীন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু অসুস্থ হয়ে মারা যান।
রাজধানীর পুরান ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ই নভেম্বর ইতিহাসের কলঙ্কজনক এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এ জন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত দুই কপি পেপারবুক তৈরি করা হয়েছে। রক্তাক্ত ওই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিডিআর) নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়।