আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্র গত ৭০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম একজন নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ। লিসা মন্টগোমারি নামের অভিযুক্ত ওই নারী ২০০৪ সালে মিসৌরি রাজ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার পেট কেটে গর্ভস্থ শিশুটিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ৮ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ানাতে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে লিসা মন্টগোমারির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।
মার্কিন মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত তথ্যকেন্দ্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে সবশেষ যে নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিলো তার নাম বনি হেডি। ১৯৫৩ সালে মিসৌরির একটি গ্যাস চেম্বারে তার সাজা কার্যকর করা হয়েছিলো। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বলেন, লিসা মন্টগোমারি ঘৃণ্য অপরাধ করেছে। তাই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরেই জাতীয় পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ড পুনরায় শুরু করার কথা ঘোষণা করেছিলো ট্রাম্প প্রশাসন।
কে এই লিসা মন্টগোমারি:
ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে লিসা মন্টগোমারি একটি বাচ্চা কুকুর কেনার জন্য ক্যানসাস থেকে গাড়ি চালিয়ে ভিকটিম ববি জো স্টিনেটের বাড়িতে আসেন। স্টিনেট তখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ঘরের ভেতরে ঢোকার পরই লিসা মন্টগোমারি স্টিনেটকে আক্রমণ করেন এবং তার গলা টিপে ধরেন। এক পর্যায়ে স্টিনেট জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর একটি ছুরি দিয়ে মন্টগোমারি স্টিনেটের তলপেট চিরে ফেলেন। তখন স্টিনেটের জ্ঞান ফিরে আসে। এরপর তাদের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি হয়। মন্টগোমারি তখন স্টিনেটের গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে হত্যা করে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, মন্টগোমারি পরে স্টিনেটের পেট থেকে শিশুটিকে বের করে তাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। সে তাকে তার নিজের বাচ্চা বলে দাবি করে।
এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হলে একজন বিচারক অপহরণ ও হত্যার দায়ে মন্টগোমারিকে দোষী সাব্যস্ত করেন। সর্বসম্মতিক্রমে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মন্টগোমারির আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আদালতে যুক্তি দেয়া হয় যে শৈশবে তাকে পেটানোর কারণে তার মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়ায় মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলো সে। তাই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ঠিক হবে না।
ফেডারেল ও রাজ্য পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ডের পার্থক্য:
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী, দুইটি পর্যায়ে অপরাধের বিচার হতে পারে। এই বিচার হতে পারে জাতীয় পর্যায়ে ফেডারেল আদালতে অথবা আঞ্চলিক পর্যায়ে রাজ্যের আদালতে। কিছু কিছু অপরাধের বিচার সঙ্গে সঙ্গেই ফেডারেল আদালতে শুরু হয়ে যায়। তার মধ্যে রয়েছে মুদ্রা জাল ও চিঠি চুরি করা। অপরাধের মাত্রা কতো বেশি তার ওপর নির্ভর করেও ফেডারেল আদালতে সেসব অপরাধের বিচার হতে পারে।
১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া এক রায়ে রাজ্য ও জাতীয় এই দুই পর্যায়েই মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও যতো মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় ছিলো সেগুলোও তখন বাতিল করা হয়। এর চার বছর পর ১৯৭৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের আরেকটি রায়ে রাজ্য পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ডপুনরায় কার্যকর করার অনুমতি দেয়া হয়। ১৯৮৮ সালে সরকার একটি আইন করে যার ফলে ফেডারেল পর্যায়েও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা বৈধ হয়ে যায়।
মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত তথ্যকেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী, ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে ৭৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে মাত্র তিনজনের সাজা কার্যকর করা হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে মন্টগোমারির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে সেটি হবে জাতীয় পর্যায়ে এই বছরের অষ্টম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দীর্ঘ বিরতির পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার গত বছর এই সাজা পুনরায় কার্যকর করার কথা ঘোষণা দেন।