জো বাইডেনের বাবা তাকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে কে কতবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল সেটি বড় কথা নয়। তুমি কত দ্রুত উঠে দাঁড়াতে পেরেছো সেটাই তোমার সাফল্যের পরিচায়ক।’
বাবার এই কথা আমলে নিয়ে বাইডেন কখনও হারেননি। ১৯৮৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হতে না পারা, ২০০৮ সালেও একই অবস্থা হয়। তারপর বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই মেয়াদ পার করার পর ২০১৫ সালে প্রার্থিতার প্রস্তুতির সময় ছেলের মৃত্যু। কিন্তু সেটিও কাটিয়ে উঠে বার্নি স্যান্ডার্সের সঙ্গে প্রাইমারিতে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উঠে আসেন বাইডেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০ নভেম্বর ৭৮তম জন্মদিনের আগেই আমেরিকার সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হওয়া নিশ্চিত হচ্ছে তার।
ফিরে দেখা
১৯৬৬ সালে সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাইডেন নিলিয়া হান্টারকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে তিন সন্তান রয়েছেন—জোসেফ আর ‘বিউ’ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা। ১৯৭২ সালে বড় দিনের আগে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিলিয়া নিহত হন। তার মেয়ে নাওমিও দুর্ঘটনায় মারা যান।
নিলিয়াকে তিনি বলেছিলেন, ৩০ বছর বয়সের মধ্যে তার স্বপ্ন সিনেটর হওয়ার। সিনেটর হওয়ার পরের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া। তিনি তার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। নিলিয়াকে হারানোর ১ বছরের মাথায় ১৯৭৩ সালে বাইডেন জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তার।
১৯৭২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন জনপ্রিয় রিপাবলিকান সিনেটর স্যালেব বগসের বিপক্ষে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রার্থী হন তিনি। তারপর নাম লেখান ইতিহাসে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী পঞ্চম সিনেটর নির্বাচিত হন।
ডেলাওয়ার থেকে মোট ৬ বার সিনেটর নির্বাচিত হন জো। সিনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা আইনসহ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়ন করেন তিনি।
২০০৭ সালে আবার নির্বাচনে দাঁড়ান। সেবার বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হন এবং রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন বাইডেনকে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৫ সালে আবারও প্রিয়জন হারান। মস্তিষ্কের ক্যান্সারে বড় ছেলে বো বাইডেনের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন জো। ২০১৬ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পাবার আগেই সরে যান।
ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে নানা উত্থান-পতনের পর ঘুরে দাড়ান জো বাইডেন। বাইডেন পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক আমেরিকান সিনেট কমিটিতে কাজ করেছেন দীর্ঘ দিন। সিনেটের এই কমিটির সভাপতি হিসেবে ২০১২ সালের অক্টোবরে আমেরিকার রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের ইরাক যুদ্ধে যাবার বিষয়টিকে অনুমোদন দেবার সিদ্ধান্ত ছিল তার ওপর।
এর ১১ বছর আগে উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশকে সাদ্দাম হুসেনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুমোদনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন বাইডেন।
বাইডেনের হুঁশিয়ারি স্বত্ত্বেও উপসাগরীয় যুদ্ধের পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ওই যুদ্ধে আমেরিকান মারা যায় অল্প সংখ্যক।
এরপর থেকে বাইডেনকে পররাষ্ট্র ও জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির ক্ষেত্রে দুর্বলচিত্ত বলে তুলে ধরা শুরু হয়।
ওই ভোট নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হবার পরবর্তী কয়েক বছর বাইডেন আন্তর্জাতিক বিষয়ে কট্টর অবস্থান দেখাতে শুরু করেন, যেমন বলকান গৃহযুদ্ধে আমেরিকান অবস্থান, ইরাকে বোমা হামলা এবং আফগানিস্তানে দখলদারিত্ব কায়েমের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেন।
প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ইরাকের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে এই অভিযোগে যখন ইরাকে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর প্রস্তাব করেন, তখন বাইডেন তাতে জোরালো সমর্থন দিয়েছিলেন।
ইরাক যুদ্ধের পর তিনি বামপন্থার দিকে ঝোঁকেন। তিনি ইরাকে আমেরিকান সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধির বিরোধিতা করেন এবং সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী জোরদার করার এবং ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিপক্ষে পরামর্শ দেন।
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হবার লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দেবার পর তিনি ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের প্রতি আমেরিকার সমর্থন বন্ধ করার পক্ষেও মত তুলে ধরেন।