২৮ নভেম্বর ২০২০, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করায় হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর চরমোনাই পীর সৈয়দ ফয়জুল করীমকে গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ একাংশের (বুলবুল-মামুন) নেতাকর্মীরা৷
শনিবার (২৮নভেম্বর) বিকেল ৪টায় তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে৷ ‘মহানবী (সা.)-এর অবমাননাকারী ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারী ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’র ব্যানারে ওই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করা হয়৷ পরে শাহবাগ মোড়ে এসে অবরোধ শুরু হয়৷ এতে রাস্তা অবরোধ করে রাখায় রাজধানীর শাহবাগমুখী রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে৷
সমাবেশে নেতাকর্মীরা মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন৷
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করতে হবে। মহানবী (সা:) ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করার অপরাধে আজ থেকে সমগ্র বাংলাদেশে ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলো মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এদেরকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার না করলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সারাদেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আল আমিন সংস্থা আয়োজিত মাহফিলের তৃতীয় দিনে প্রধান বক্তা হিসেবে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিরোধীতার মুখে মাহফিল স্থলে আসেননি মাওলানা মামুনুল হক।
এ প্রসঙ্গে হেফাজতের মহাসচিব বাবুনগরী বলেন, ‘সরকার ও প্রশাসন থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। মামুনুলের মাহফিলে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তাদের আপত্তি থাকায় তিনি আসেননি।’
তিনি আরো বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম সবসময় শান্তির পক্ষে। মামুনুল না আসলেও, তার নামে কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে, তাকে অপমান করা হয়েছে, আমরা সরকারের কাছে এর প্রতিকার চাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। হেফাজতে ইসলামও কোনো অরাজকতা চায় না।’
এদিকে শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) চরমোনাই পীর সৈয়দ ফয়জুল করীম এবং মামুনুল হকের অনুসারী মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা জাতীয় বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভে তারা ভাস্কর্যবিরোধী স্লোগান দেয়। পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে শিক্ষার্থীরা বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় মিছিলে লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৭ দফা দাবি:
১. মহানবী (সা:) কে অবমাননা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করার অপরাধে ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২. দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলা, উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করতে হবে।
৩. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে অবিলম্বে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং পবিত্র মসজিদ-মাদ্রাসায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বন্ধ করতে হবে।
৪. বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৫. ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৬. মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করে নজরদারি বাড়াতে হবে।
৭. সকল মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।