১ ডিসেম্বর ২০২০, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারে দুটি এয়ারলাইনসের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সিআইডির নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, ওই দুটি এয়ারলাইনসের কর্মকর্তাদের সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাতে কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, তাদের কিছু কর্মী মানব পাচারে জড়িয়ে পড়েছেন। এয়ারলাইন্স দুটির নাম প্রকাশ না করলেও সিআইডি প্রধান বলেছেন, সেগুলো বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি নয়।
সম্প্রতি সিআইডির অনুরোধে মানবপাচারকারী চক্রের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল। রেড নোটিশ জারি করা আসামিরা হলেন- মিন্টু মিয়া, স্বপন, শাহাদাত হোসেন, নজরুল ইসলাম মোল্লা, ইকবাল জাফর ও তানজিরুল।
ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, গত ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশ পুলিশ মানবপাচারকারী চক্রের চিহ্নিত ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলের কাছে সহায়তা চায়। গত ২৭ নভেম্বর তাদের বিষয়ে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানবপাচারের সঙ্গে ছয়জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আরো কেউ আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মাহবুবুর রহমান আরো বলেন, নিহত ২৬ বাংলাদেশি প্রতারণার শিকার হন। তারা ভ্রমণ ভিসা ও কনফারেন্স ভিসায় দেশ ছাড়েন। এ ধরনের ভিসায় যারা যান, তারা ফিরতি টিকিট কাটেন। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের টিকিট ছিলো ‘ওয়ানওয়ে’। এ ধরনের টিকিট ইস্যু করা হয় যারা লম্বা সময়ের জন্য কোনো দেশে অবস্থান করেন, তাদের জন্য।
‘ওয়ানওয়ে’ টিকিটে দেশ ছাড়ার বিষয়টি বিমানবন্দরে কর্মরত পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তাদের চোখ এড়াল কী করে, জানতে চাইলে সিআইডির প্রধান বলেন, অভিবাসন পুলিশকে তারা ভুয়া ফিরতি টিকিট দেখিয়েছিলেন।
ইন্টারপোল যে ছয়জনের ব্যাপারে রেড নোটিশ জারি করেছে তাদের একজন তানজিমুলকে ইতালিতে শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যদের খোঁজ করা হচ্ছে। সিআইডি দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের বিচার করতে চায় বলেও জানিয়েছেন মাহবুবুর রহমান।
চলতি বছরের মে মাসে লিবিয়ার মিজদাহতে গুলি করে ২৬ জনকে হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় সিআইডি বাদি হয়ে পল্টন ও বনানীতে তিনটি মামলা করে। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আরও ২৩টি মামলা হয়। সিআইডি মোট ২৫টি মামলার তদন্ত করছে। এসব মামলায় আসামি হয়েছেন ২৯৯ জন, গ্রেপ্তার আছেন ১৭১ জন, ৪২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১৯ সালের মে মাস থেকে বিভিন্ন সময় ৩৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক লিবিয়ায় পাচার করা হয়। তাদের ইতালি ও স্পেনে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ার বেনগাজীতে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তিপণের জন্য গত ২৬ মে নির্মমভাবে পাচার হওয়া ২৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা করে দুর্বত্তরা। এ ঘটনায় মানবপাচারের অভিযোগে সারাদেশে ২৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে সিআইডি বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। বাকিগুলো ভুক্তোভোগীদের পরিবার বাদী হয়ে করেছে।