১২ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
পুরান ঢাকার লালবাগের বেগমবাজারের একটি ছোট্ট গলি। কয়েকটি ভবন পার হওয়ার পরই চারতলা বিশিষ্ট একটি জরাজীর্ণ ভবনের দেখা মেলে। ভবনটির সিঁড়ি বেয়ে চারতলায় উঠতেই দেখা যায়, একটি কক্ষে ৪ থেকে ৫ জন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের কেউ চুলায় তাপ দিচ্ছেন আবার কেউ চুলা থেকে গরম তেল নামিয়ে ঠান্ডা করছেন। কেউ আবার তেলে নানা নকল উপকরণ মিশিয়ে ঘি তৈরি করছেন।
পাশের অন্য একটি কক্ষে প্রাণ ও আড়ংয়ের ঘি’র মতো নামি-দামি ব্র্যান্ডের কৌটায় কেজি কেজি ঘি সাজানো রয়েছে। এসব ঘি তারাই তৈরি করেছেন। এই দৃশ্য দেখে যে কেউ ভাববে প্রাণ কিংবা আড়ংয়ের ঘি-এর ছোট কারখানা এটি। তাঁদের এমন ব্যস্ত সময়ের মাঝে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপস্থিতিতে হতবাক হয়ে পড়েন ঘি তৈরির কর্মচারি ও কারিগররা। অন্যদিকে ডিবি’র উপস্থিতি টের পেয়ে ভেজাল ঘি তৈরির মূলহোতা ও ভবনটির মালিক আব্দুস সামাদ পালাতে চেয়েছিলেন।
এর পরই বেরিয়ে আসে ঘি তৈরির আসল রহস্য। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তারা স্বীকার করেন, নামি-দামি ব্র্যান্ডের কৌটায় ভর্তি যে ঘি তারা বানিয়েছেন- তাতে ঘি’র কোনো কিছু নেই। মূলত তারা ডালডা ও সয়াবিন তেলে শিমুল তুলার বিচির নির্যাস দিয়ে এবং রঙ মিশ্রিত পানি মিশিয়ে রাতারাতি বানিয়ে ফেলে কেজি কেজি ঘি!
আর এসব ঘি দেদারছে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তাদের কাছ থেকে এসব ঘি কিনে নিয়ে যায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। নামমাত্র মূল্যে এসব ঘি কিনে বাজারে ক্রেতাদের কাছে নামি-দামি ব্র্যান্ডের দামে বিক্রি করা হয়। যদিও গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান প্রায় ৫ মণ নকল ঘি জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘি বাজারে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিলো।
এই সময় ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের লালবাগ টিম নকল ঘি তৈরির সংগে জড়িত থাকার অপরাধে মালিক আব্দুস সামাদ, কারিগর রবিউল ইসলাম ও দুই কর্মচারিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পর কারখানাটির মালিক আব্দুস সামাদ জানান, গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এই কাজ করছেন। তবে বছর দু’য়েক আগে পুলিশের হাতে একই অপরাধে গ্রেফতার হয়ে বছরখানেক জেলও খেটেছেন। এরপর জামিনে বেরিয়ে কিছুদিন যেতে না যেতেই ফের একই কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার দাবি- পেটের দায়ে তিনি এসব নকল ঘি তৈরি করছেন।
তবে কর্মচারিরা জানিয়েছেন, পেটের দায়ে নয়- বরং অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ তাই এমনটা করছে কারখানার মালিক।
কর্মচারি রিপন জানান, তিনি মাস তিনেক ধরে এখানে কাজ করেন। এই সময় তিনি দেখেছেন, ওই কারখানা মালিক বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রাণ, আড়ং ও বাঘা ঘি’র ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া কৌটা সংগ্রহ করেন। বিশেষ করে এসব কৌটা বিভিন্ন ফেরিওয়ালা এবং বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার থেকে সংগ্রহ করতো আব্দুস সামাদ। সংগৃহীত এসব কৌটা প্রতি পিচ দশ টাকা দিয়ে কিনতো সে। এরপর তাতে নকল ঘি ভরে নতুনভাবে বাজারে বিক্রি করতো।
ডিবি’র লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. রাজীব আল মাসুদ বলেন, গোপন সূত্রে তথ্য পাওয়ার পর আমরা অভিযান চালিয়েছি নকল ঘি তৈরির কারখানায়। এই ঘটনায় জড়িত কারখানার মালিকসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, তারা বিভিন্ন ব্র্যান্ড কোম্পানির পুরনো কৌটা সংগ্রহ করে তাতে এসব নকল ঘি ভরে বিক্রি করতো। তারা এসব নকল ঘি-তে সয়াবিন ও ডালডা তেল মিশিয়ে তাতে শিমুল তুলার বিচির নির্যাস দিতো। এতে করে খাঁটি ঘি’য়ের মতো দেখা যেতো।