১৫ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
ভারত, বাংলাদেশ আর নেপালের পর এবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে প্রাণঘাতী মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত তিন জন ব্যক্তিকে শনাক্ত করার হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ভাইরাসজনিত এই রোগ মূলত ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ নামে পরিচিত।
ওমানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, মহামরি কোভিড আক্রান্ত তিন জন ব্যক্তির দেহে প্রাণঘাতী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ৩০ হাজার করোনা রোগীর দেহে এর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস করোনার মতো অতিসংক্রামক না হলেও এতে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর শঙ্কা ৫০ শতাংশ। তাইতো আচমকা ভাইরাসজনিত এই রোগের প্রকোপ ছড়ালে মহামারি কোভিড মোকাবিলার প্রচেষ্ট ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় উদ্বিগ ওমান কর্তৃপক্ষ।
উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর মধ্যে ওমানে প্রথম ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হলো। তবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ওই তিন ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে আবারও মহামারি করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এতে করে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা ফের বাড়ছে। এমন উদ্বেগের মধ্যে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানালো।
করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক নতুন ধরনের কারণে হাসপাতালগুলোতে চরম শয্যাসংকটের কথা চলতি সপ্তাহেই জানিয়েছে ওমানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০। মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৫৬৫ জনের।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?
মাইকরমাইসিটিস গোত্রের কয়েকটি ছত্রাক প্রজাতি থেকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। শরীর দুর্বল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এই ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। এর পাশাপাশি আরও বিভিন্ন কারণে এই ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
কিন্তু নতুন করে যে চিন্তা দেখা দিয়েছে, সেটি হল— করোনা রোগীদের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ প্রবল হয়ে উঠছে। বিশেষত যে রোগীদের স্টেরয়েড দিতে হচ্ছে বা যারা আগে থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছেন।
এছাড়া যে রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি ও স্টেরয়েড থেরাপি নিয়েছেন তাদেরও মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ ঘটছে।
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের (এইমস) পরিচালক ড. রণদীপ গুলেরিয়া বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে প্রাথমিকভাবে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে— ১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ২. রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা ৩. স্টেরয়েড বা কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের সঠিক ব্যবহার।
ভারতের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার পর দ্বিতীয় সংক্রমণ হিসেবে মিউকরমাইকোসিস বা কালো ছত্রাকে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশের মৃ্ত্যু হয়েছে। এছাড়া, করোনা রোগীদের চিকিৎসার সময়ে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ব্যবহার রোগীদের শরীরে ‘ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স’ বা ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু তৈরি করছে। যা পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয়বার ইনফেকশনের জন্য দায়ী।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, আরও স্পষ্ট করে বললে হাসপাতালে যাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে, কিংবা স্টেরয়েডের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হচ্ছে, তারা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকজনিত সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। আবার ছত্রাকে সংক্রমণের পর ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে সংক্রমিতদের বড় অংশের মৃত্যু হচ্ছে।
ফাঙ্গাস সংক্রমণের উপসর্গ
কিছু কিছু ফাঙ্গাস থেকে সংক্রমণের উপসর্গগুলোর সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগীর লক্ষণগুলোর মিল রয়েছে। যেমন জ্বর, কাশি এবং নিঃশ্বাস নিতে না পারা।
ক্যানডিডা ফাঙ্গাসের বাড়তি উপসর্গের মধ্যে রয়েছে সাদা রঙের র্যাশ বা ক্ষত- যে কারণে একে অনেক সময় বলা হয় ‘সাদা ফাঙ্গাস’। নাক, মুখ, ফুসফুস, পাকস্থলি বা নখের গোড়ায় এই ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা যেতে পারে, যে র্যাশ অনেক সময় সাদা ছানার মতো দেখায়।
এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শরীরে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে অর্থাৎ তা রক্তে চলে গেলে প্রায়ই রক্ত চাপ কমে যাওয়া, জ্বর, পেটে ব্যথা এবং মূত্রনালীর প্রদাহের মত উপসর্গ দেখা যায়।