• বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন

বৈঠকে আসেননি স্বাস্থ্যের ডিজি, ক্ষোভ সংসদীয় কমিটির

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৯২ বার পঠিত
আপডেট টাইম : রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

২০ জুন ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সংসদীয় কমিটির বৈঠকে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। রোববার (২০ জুন) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

বৈঠকে, কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর এ পর্যন্ত কত টাকার মাস্ক ও কিট ক্রয় করা হয়েছে, ভ্যাকসিন সঙ্কট মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, ভ্যাকসিন জিটুজি নাকি এজেন্টের মাধ্যমে আনা হচ্ছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আইসিউ ও অক্সিজেনের বর্তমান অবস্থা ও সম্ভাব্য সংকট থেকে উত্তরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিস্তারিত এই আলোচনায় ডিজি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটি।

সংসদীয় কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, বৈঠকে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা ছিল। কিন্তু ডিজি বৈঠকে আসেননি। গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে ডিজি না আসায় সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কমিটির সভাপতি এ নিয়ে ডিজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। যদি ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তবে বিষয়টি সংসদে অধিবেশনে বিষয়টি আনা হতে পারে।

কমিটির সদস্য আব্দুল আজিজ বলেন, স্বাস্থ্যের ডিজি বৈঠকে না আসায় তারা নাখোশ হয়েছেন। বিষয়টি কমিটির সভাপতি বিস্তারিত বলতে পারবেন।

জানা গেছে, বৈঠকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা’ এখনও না পৌঁছানোয় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। কমিটি সহজতর প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে তাদের পরিবারের নিকট প্রণোদনার অর্থ পৌঁছানোর সুপারিশ করেছে।

কমিটির সদস্য আব্দুল আজিজ বলেন, অনেকে অভিযোগ করেছেন, তারা প্রণোদনা পাননি। অনেক ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এই মানুষগুলো মারা গেছে। তাদের পরিবার নিঃস্ব। তারা যদি প্রণোদনা ঠিকমতো না পায়, পরিবার কষ্টে থাকছে। আমরা মন্ত্রণালয়কে বলেছি দ্রুত এই প্রণোদনা যাতে সংশ্লিষ্টদের পরিবারের কাছে পৌঁছায়।

বৈঠকে অংশ নেওয়া সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কমিটির কাছে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়টি আলোচনা হয়। মন্ত্রণালয় নানারকম আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা তুলেছে। কমিটি বলেছে, এসব জটিলতা দূর করাই মন্ত্রণালয়ের কাজ। কেউ মারা গেলে তার পরিবার কী তথ্য নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরবে?

কমিটির সভাপতি, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

কেনো অনুপস্থিত ছিলেন, সে বিষয়ে খুরশীদ আলমের কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

সরকারিভাবে টিকা উৎপাদনের চিন্তা

কমিটি বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের গবেষক সানজান কে দাস স্বাস্থ্য সচিবের কাছে সরকারি পর্যায়ে টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে অবকাঠামো তৈরি করতে একটি প্রস্তাব পাঠান। সানজান দাসের টিকা তৈরির প্রযুক্তির আরএনডি ও প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে বলে কার্যপত্রে বলা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগসের বিদ্যমান কিছু অবকাঠামো এবং নতুন কিছু যন্ত্রপাতি কিনলে টিকা উৎপাদন সম্ভব বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়। বিষয়টির কারিগরি দিক পর্যালোচনার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় বিবেচনা করছে।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে দেশের সকল জনগণকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে টিকা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

কমিটির আগের বৈঠকে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে ‘উৎসাহ’দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় জানানয়, তিনটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের টিকা তৈরির সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে। এগুলো হলো- ইনসেপটা, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। এরমধ্যে ইনসেপটার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন রেডি টু ফিল ও মাস্টার সিড উভয় প্রক্রিয়ার সক্ষমতা রয়েছে। পপুলারের মাস্টার সিড হতে উৎপাদনের সক্ষমতা নেই। হেলথ কেয়ার অনুমোদন পেয়েছে তবে এখনও উৎপাদনে যায়নি।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর থেকে ৭ জুন পর্যন্ত সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরস ডিপো (সিএসডি) এর মাধ্যমে ২৬৬ কোটি ১৭ লাখ ২৪ হাজার টাকার মাস্ক এবং ৪০১ কোটি ২৫ লাখ টাকার আরটি-পিসিআর টেস্ট কিট কেনা হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৩৯ কোটি ৯ লাখ ২২ হাজার টাকার মাস্ক, ৩৫ কোটি ৮০ লাখ ৩১ হাজার টাকার আরটিপিসিআর কিট এবং কোভিড রেসপন্সে ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রকল্পের আওতায় ইউনিসেফের মাধ্যমে ৩২ কোটি ৯০ লাখ ৭২ হাজার টাকার কিট কেনা হয়েছে।

এতে বলা হয়- ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি হয়। এর মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ পাওয়া গেছে। গত ৭ জুন পর্যন্ত ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ এবং ৪২ লাখ ২৩ হাজার ১৭৮ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করার জন্য ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৩০টি টিকা ঘাটতি রয়েছে।

কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য সারাদেশে এক হাজার ১২৫টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে ৪৬৬ শয্যা আছে। ঢাকা মহানগর ছাড়া দেশের ২১টি জেলায় আইসিইউ শয্যা আছে। কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য ১১ হাজার ৯১৬টি সাধারণ বেড রয়েছে। ঢাকা মহানগরে এক হাজার ৫০১টি বেড বাড়ানো হয়েছে। দেশে বর্তমানে কোনও অক্সিজেন সংকট নেই। মজুদ অক্সিজেন ৯০০ মেট্রিক টন। প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৭৫ মেট্রিক টন। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ২৩ হাজার ৮৯টি। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সংখ্যা এক হাজার ৬০৩টি। অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের সংখ্যা এক হাজার ৫২২টি।

এদিকে বৈঠকে তথ্য বিভ্রান্তি এড়াতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য প্রদান ও পর্যালোচনা শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রদানের লক্ষ্যে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করার অনুরোধ করা হয়। বৈঠকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম-এর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, আ ফ ম রুহুল হক, মো. আব্দুল আজিজ, সৈয়দা জাকিয়া নুর, রাহগির আলমাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ) এবং মো. আমিরুল আলম মিলন অংশ নেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

পুরাতন সংবাদ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১