০১ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
রাজধানীর ভাটারা এলাকায় কুলসুম আক্তার নামের এক গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক ব্যাংকার দম্পতির বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) বিকালে ওই কিশোরীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তবে পুলিশ সঙ্গে না আসায় তাকে ভর্তি করা হয়নি।
অভিযুক্ত দম্পতি হলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আসাদুর রহমান ও তার স্ত্রী মাহফুজা রহমান।
আমাদের মেডিকেল প্রতিবেদক জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে অসুস্থ অবস্থায় কুলসুমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে পুলিশ সঙ্গে না আসায় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেননি নির্যাতিত ওই কিশোরী।
আহত কুলসুম আক্তার ঢাকা মেডিকেলে কর্মরত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আট মাস ধরে ওই বাসায় কাজ করি। কাজ করতে দেরি হলে তারা আমাকে মারপিট করত, গরম পানির ছ্যাকা দিত, খুন্তি গরম করে ছ্যাকা দিত এবং আমার মাথা দেয়ালের সাথে ধরে আঘাত করতো। এখানে আসার পর থেকে আমাকে নির্যাতন করতো স্বামী ও স্ত্রী মিলে । আমি অনেকবার পালাতে চেষ্টা করছি কিন্তু পারিনি। গতকাল বুধবার আমাকে কুড়িল বিশ্বরোডে ওভারব্রিজের নিচে আমার বোনের কাছে দিয়ে যায়। এত নির্যাতন করেছে আমাকে আপনারা দেখেন। আমি পালাতে পারিনি, পারলে এত নির্যাতনের স্বীকার হতাম না।’
নির্যাতিত কুলসুমের বড়বোন ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমার বোন আট মাস আগে ওই বাসায় কাজ করতে যায় মাসে ছয় হাজার টাকা বেতনে। কিন্তু তিন মাসে তারা আমাদের পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে। এখনো অনেক টাকা পাই। আপনারা দেখেন আমার বোনকে কীভাবে নির্যাতন করেছে দেখেন। এভাবে কোনো সভ্য মানুষ নির্যাতন করে।’
ফাতেমা বলেন, ‘ওই বাসার গৃহকর্তা একটি বেসরকারি ব্যাংকের অফিসার। তিনি নিজে এবং তার স্ত্রী আমার বোনকে নির্যাতন করেছেন। বুধবার রাতে কুড়িল বিশ্বরোডে সিএনজি পাম্পের পাশে আমার কাছে দিয়ে চলে যায়। আমার বোনের শরীর অনেক খারাপ। তাই ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এলাম, কিন্তু তারা বলছে পুলিশ ছাড়া ভর্তি নেবে না।’
আহত কুলসুম আক্তার কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার ধলা আজিবপুর গ্রামের আব্দুল রহমানের মেয়ে।
অভিযুক্ত আসাদুর রহমান আরিফ মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাকে এখানে কাজ করতে এনেছিলাম। কিন্তু সে পাগলামি করতো। আমি তার বাবাকে জানিয়েছি, আপনার মেয়েকে নিয়ে যান। গতকাল আমি তার বোনের কাছে ১৪ হাজার টাকা দিয়েছি। এর আগে আমি ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। আরও ছয় হাজার টাকা দিয়ে দেব।’ তাকে আপনারা এত নির্যাতন করেছেন কোন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে নির্যাতন করিনি।’
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি শিশু নির্যাতনের ঘটনা আছে। পুলিশ সঙ্গে না আসায় সে ভর্তি হতে পারেনি। আমরা ভাটারা থানাকে বিষয়টি জানিয়েছি, তারা তদন্ত করে দেখছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভাটারা থানার পরিদর্শক (অপারেশনস্) পিযূস কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। আমরা তার বাসায় গিয়েছিলাম, কিন্তু সে বাসা পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’