০৬ জুলাই ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
করোনাভাইরাস মহামারি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় চাপ সামলাতে সহস্রাধিক চিকিৎসককে একসঙ্গে বদলি করেছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। ৪ ও ৫ জুলাই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অন্তত ৪৮টি আদেশে ১ হাজার ২৩৯ জন চিকিৎসককে বুধবারের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। সেখানে তারা কোভিড ইউনিটে দায়িত্ব পালন করবেন।
উপসচিব জাকিয়া পারভিনের স্বাক্ষরে এসব প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তাদের ‘সংযুক্তিতে পদায়ন’ করা হল।
যেসব চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মেডিকেল কলেজ থেকে একই মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে, একই জেলার জেনারেল হাসপাতাল বা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিংবা পাশের কোনো জেলায় তাদের পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনার রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। এ কারণে করোনাকালীন সংকট থেকে উত্তরণের জন্য মেডিক্যাল কলেজগুলো থেকে চিকিৎসকদের হাসপাতালগুলোতে সংযুক্ত করা হয়েছে। করোনাকালীন সঙ্কট কেটে গেলে তারা আবার পূর্বের কর্মস্থলে ফিরে যাবেন। এটাকে বদলি বলা যায় না, তাদের হাসপাতালগুলোতে সংযুক্ত করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, এই মুহূর্তে মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের কাজের চাপ কম। আমাদের অন্যান্য হাসপাতালে অন্যান্য ডাক্তাররা খুব প্রেশারে পড়ে গেছে রোগীর চাপে। তারা সামলাতে পারছেন না। তাদের সহায়তা করতেই মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসকদের ডেকে আনা হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। এটা কারও ব্যক্তিগত বিষয় না। ওই জায়গায়ই আছে, সেখানে অ্যাটাচমেন্ট করে দেওয়া হয়েছে।
বদলি ও পদায়নকৃতদের মধ্যে পাঁচ সহকারী সার্জনকে গত ৫ জুলাই এক সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে পরবর্তী পদায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তাদের খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অধিদফতরে ওএসডি করা হয়।
বদলি করাদের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ থেকে কুষ্টিয়া জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে ২৩ জন চিকিৎসককে। পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ থেকে পটুয়াখালী জেলা হাসপাতালে বদলি ও পদায়ন করা হয় ১৩ জন চিকিৎসককে। বান্দরবান মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৬ জন চিকিৎসককে বান্দরবান জেলা হাসপাতালে বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে শরিয়তপুর জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে ২৭ জন চিকিৎসককে। আর ওই কলেজ থেকে একই কলেজের হাসপাতালে অর্থাৎ ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন পদে সংযুক্ত দেওয়া হয়েছে আরও ৩৬ জনকে।
অন্য এক প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৮ জন চিকিৎসককে খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতালে, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২২ জন চিকিৎসককে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা হাসপাতালে, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ থেকে আরও ২১ জন চিকিৎসককে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। চাঁদপুরের আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজ থেকে চাঁদপুর জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে ২২ জনকে বদলি করা হয়।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ থেকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপতালে বদলি করা হয়েছে ২৫ জনকে এবং একই প্রজ্ঞাপনে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ থেকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে আরও ৩৬ জনকে।
সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ থেকে সাতক্ষীরা জেলা হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে ১৬ জন চিকিৎসককে। কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ থেকে কক্সবাজার জেলা হাসপাতালে এবং রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে ৪৮ জন চিকিৎসককে।
মাগুরা মেডিক্যাল কলেজ থেকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ১৪ জন, নওগাঁ মেডিক্যাল কলেজ থেকে নওগাঁ জেলা হাসপাতালে ১৪ জন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও রাজশাহী ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হেলথ টেকনোলজি থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সরদ হাসপাতালে ২২ জন ও পাবনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাবনা ২৫০ বেড জেনারেল হাসপাতালে ১৮ জনকে বদলি করা হয়েছে।
দিনাজপুর এম আবদুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে ঠাকুরগাঁও জেলা হাসপাতালে ১৮ জন এবং পঞ্চগড় জেলা হাসপাতালে ১৮ জনকে পদায়ন করা হয়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে ১৭ জন, কুড়িগ্রাম জেলা হাসপাতালে ২৪ জন এবং লালমনিরহাট জেলা হাসপাতালে ২০ জনকে পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজ থেকে নীলফামারী জেলা হাসপাতালে ১১ জনকে পদায়ন করা হয়েছে।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে খুলনা জেলা হাসপাতালে এবং খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে ২৮ জন চিকিৎসককে। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ এবং বাগেরহাট মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট স্কুল থেকে ১৪ জনকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ থেকে মেহেরপুর জেলা হাসপাতালে ১৫ জন, ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হেলথ টেকনোলজি ও কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ থেকে ঝিনাইদহ জেলা হাসপাতালে ১৫ জন। নোয়াখালীর আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজ থেকে লক্ষীপুর জেলা হাসপাতালে ১৯ জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে ফেনী জেলা হাসপাতাল ও দাগনভূইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন, রাঙ্গামাটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে ১৮ জন, আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজ থেকে নোয়াখালী জেলা হাসপাতালে ২৮ জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফরমেশন ডিসিজেজ (ডিআইডিআইডি) ফটিকছড়ি উপেজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১৪ জনকে পদায়ন করা হয়েছে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০২ জন, সিরাজগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ, শহীদ এম মনমুর আলী মেডিক্যাল কলেজ এবং সিরাজগঞ্জ মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল থেকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ বেড বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ২০ জন, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে জয়পুরহাট জেলা হাসপাতাল ও জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও বগুড়া ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে বগুড়া ২৫০ বেড মোহাম্মদ আলী জেলা হাসপাতালে ৪৩ জন এবং পাবনা মেডিক্যাল কলেজ ও শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ থেকে নাটোর জেলা হাসপাতালে ১৫ জনকে বদলি করা হয়।
যশোর মেডিক্যাল কলেজ থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতালে ১৪ জন, ঝালকাঠি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ঝালকাঠি জেলা হাসপাতালে ২০ জন, বরিশালের শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে ২০ জন, শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে ও বরিশাল জেলা হাসপাতালে ৫১ জন, পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ থেকে বরগুনা জেলা হাসপাতালে ১২ জন, পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ থেকে ভোলা জেলা হাসপাতালে ১২ জনকে বদলি করা হয়েছে।
এছাড়া গত রোববারের প্রজ্ঞাপনে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ৬৫ জন চিকিৎসককে একই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হয়েছে এবং দিনাজপুর এম আবদুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম আবদুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও দিনাজপুর জেলা হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে ৪৬ জনকে।
চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেইফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজের (এফডিএসআর) যুগ্ম-মহাসচিব ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী বলেন, বদলি একটি সরকারি প্রক্রিয়া, এটা নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকার কথা নয়। কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যারা শিক্ষক, তাদেরও বদলি করা হয়েছে। যারা শিক্ষক তাদেরও ক্লিনিক্যাল ইস্যু দেখতে বলা হয়েছে। এতে খানিকটা সমস্যা হবেই। কিছু বিষয়ের শিক্ষক আছেন যাদের কাজ শুধু পড়ানো, যেমন মাইক্রোবায়োলজি। তাদের ক্লিনিক্যাল কোনো এক্সপোজার নাই। সে রকম একজন শিক্ষককে যদি আপনি মাঠ পর্যায়ে দিয়ে বলেন যে রোগী দেখ, তার কাছ থেকে আউটপুট পাওয়া যাবে না। বরং তার মধ্যে হতাশা কাজ করবে।
বদলি হওয়া চিকিৎসকদের লকডাউনের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে সময় দেওয়া হয়েছে দুই দিন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মেডিকেল কলেজের পাশেই হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।
অনেক চিকিৎসককে মেডিকেল কলেজে লাগোয়া হাসপাতালে বদলি করা হলেও এক জেলা থেকে আরেক জেলায়, উপজেলায় বদলি করা হয়েছে এমন চিকিৎসকের সংখ্যাও কম না। দেখা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে বাগেরহাটে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ থেকে মেহেরপুরে, যশোর মেডিকেল কলেজ থেকে নড়াইল এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতালে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ থেকে যশোর জেলা হাসপাতালে।
বরিশাল মেডিকেল কলেজ থেকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল, ঝালকাঠি জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ থেকে বরগুনা জেলা হাসপাতাল, ভোলা জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে শিক্ষকদের।
সবচেয়ে বেশি ১১৫৬ জন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে। খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতাল, ফেনী জেলা হাসপাতাল. দাগনভূঁইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও পাঠানো হয়েছে তাদের কাউকে কাউকে। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের বান্দরবানে. কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের ব্রাহ্মণাবাড়িয়া জেলা হাসপাতাল ও নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।
নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বদলি করা হয়েছে চাঁদপুর জেলা হাসপাতাল এবং লক্ষ্মীপুর জেলা হাসপাতালে। সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ এবং পাবনা মেডিকেল কলেজ থেকে থেকে নাটোর জেলা হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক সদর হাসপাতাল বদলি করা হয়েছে।