• শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন

কিশোরীদের ঘর ছাড়া যাত্রাবাড়ীর প্রধান সমস্যা

ডেস্ক রিপোর্ট / ১৪৫ বার পঠিত
আপডেট টাইম : রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১

১৯ ডিসেম্বর ২০২১, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা কিশোরীদের ঘর ছাড়া। ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরীরা প্রায়ই ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। থানায় প্রতিদিনই এমন অভিযোগ আসছে বলে জানালেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাঁর অভিমত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসে এসব কিশোরী বখাটেদের শিকার হচ্ছে। তারা প্রলোভন দিয়ে কম বয়সী মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জানালেন, গত মাসে এমন ১৩টি অভিযোগ থানায় এসেছে। পরিবারের অভিযোগে প্রথমে জিডি করা হয়, কিন্তু পরে পরিবারগুলো আর যোগাযোগ করে না। অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হয়।

এই প্রতিনিধির উপস্থিতিতেই থানায় আসেন এক অভিভাবক। তিনি এসে বলেন, তাঁর মেয়ে রাজধানীর একটি নামী স্কুল থেকে সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে সে বৃত্তি পেয়েছিল। যেদিন পরীক্ষা শেষ হয়, সেদিন আর মেয়েটি বাসায় ফিরে আসেনি। পরিচিত সব জায়গা খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। নানাভাবে চেষ্টার পর জানা যায়, সে ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলা সদরে আছে। পরে পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়ে জানতে পারে বয়স বেশি দেখিয়ে জন্মনিবন্ধন করে তাঁর মেয়ে এক ছেলেকে বিয়ে করেছে।

যাত্রাবাড়ী থানায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা তার এক স্বজন বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করে তাকে উদ্ধার করেছি। এখন অপহরণের মামলা করা হবে।’

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানালেন, পরিবার থেকে আগে জিডি করা হয়েছিল। এখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ জানায়, গত এক সপ্তাহে ঝুমা নামের এক কিশোরী নিখোঁজ হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। দুই মাস আগে অন্নি ও তানজিলা নামে দুজন নিখোঁজ হয়। তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকাটিতে কম শিক্ষিত মানুষের বাস বেশি। এসব পরিবারের অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের হাতে মোবাইল ফোন। তারা ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এরপর কোনো একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করে ঘর ছাড়ছে।’ তিনি বলেন, এ জন্য আগে পরিবারগুলোকে সচেতন হতে হবে।

যাত্রাবাড়ী এলাকার অপরাধপ্রবণতা ও পুলিশি সেবার ব্যাপারে জানতে এই প্রতিনিধি গত সপ্তাহে পাঁচ ঘণ্টা যাত্রাবাড়ী থানায় অবস্থান করে ভুক্তভোগী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান।

মোহাম্মদ রায়হান নামের এক কিশোর এসে অভিযোগ করেন, কয়েকজন তরুণ এসে তাঁকে বলেন, ‘আমার বন্ধুর বোনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিস।’ এতে তিনি ভয় পেয়ে যান। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই তরুণেরা তাঁর হাতে থাকা মোবাইল ফোন নিয়ে উধাও হয়ে যান।

দুপুরের দিকে তিন নারী ও কয়েকজন যুবক আসেন থানায়। তাঁরা শনির আখড়া এলাকার একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। শনির আখড়ার মৃধাবাড়ী এলাকা থেকে পুলিশ একটি পিকআপ আটক করেছে। সেটা ছাড়ানোর তদবির করতে তাঁরা এসেছেন। অবশ্য কিছুক্ষণ পর পুলিশ সেই পিকআপটি ছেড়েও দেয়।

বেলা আড়াইটার দিকে বেশ কিছু কাগজপত্র নিয়ে আসেন ঢাকা মহানগর পুস্তক বাঁধাই শ্রমিক ইউনিয়নের ৮-১০ জন নেতা। তাঁরা জানান, শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের সংগঠনটি অনুমোদন পেয়েছে। তাই কিছু কাগজ থানায় জমা দিতে এসেছেন।

এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে সরকারি গাড়িতে থানায় আসেন যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম। তাঁকে বহনকারী গাড়িটির নম্বরপ্লেট নেই। নম্বরপ্লেটের জায়গায় ঝুলছে ইঞ্জিন নম্বর।

বিকেলের দিকে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেন মাতুয়াইলের মাঝপাড়ার বাসিন্দা মুন্নি বেগম। অভিযোগ, স্বামী দুলাল মিয়া ঠিকমতো কাজ করেন না। একেক সময় একেক এলাকায় গিয়ে বাসা নিয়ে থাকেন। মুন্নি বলেন, ‘একবার আড়াই লাখ টাকা ঋণ দিয়েছি। বাসায় কাজ করে আর কত করমু। বাসা ভাড়া, ছেলেমেয়েদের খরচ সব দিতে হয়। স্বামী কিছুই করে না।’

যাত্রাবাড়ী থানার অপরাধপ্রবণতা নিয়ে জানতে চাইলে থানার কর্মকর্তারা জানান, চুরি, হারিয়ে যাওয়া এবং পারিবারিক সমস্যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সাধারণ ডায়েরি হয়। এই এলাকায় নারীরা সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেন তাঁদের স্বামীর বিরুদ্ধে। দরিদ্র এলাকায় এ ধরনের অপরাধ থাকবেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

পুরাতন সংবাদ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১