গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদন দিবস আজ। ৪৮ বছর আগে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদের ৪০৪ সদস্যের স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানটি অনুমোদিত হয়। একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর তা কার্যকর হয়।
একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তার সংবিধান অনুসারে। সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। এটিকে রাষ্ট্র পরিচালনার ‘জননী দলিল’ বা ‘Mother Document’ বলা হয়।
জানা যায়, সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই বছরের ১৭ এপ্রিল থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এই কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে। জনগণের মতামত সংগ্রহের জন্য আহ্বান করে। সংগ্রহীত মতামত থেকে ৯৮টি সুপারিশ গ্রহণ করা হয়।
একই বছরের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন খসড়া সংবিধান বিল আকারে উত্থাপন করেন। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ (বিজয় দিবস) থেকে কার্যকর হয়।
পুরো সংবিধানটির অলংকরণ কাজের নেতৃত্ব দেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। তাকে সহায়তা করেন শিল্পী হাশেম খান, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, জনাবুল ইসলাম ও আবুল বারক আলভী।
বাংলাদেশের সংবিধান কেবল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনই নয়, সংবিধানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মূল চরিত্র বর্ণিত রয়েছে। এতে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখা বিধৃত আছে।
সংবিধান অনুসারে, দেশটি হবে প্রজাতান্ত্রিক, গণতন্ত্র হবে এদেশের প্রশাসনিক ভিত্তি, জনগণ হবে সব ক্ষমতার উৎস এবং বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন। জনগণ সব ক্ষমতার উৎস হলেও দেশ আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান অনুমোদনকালে গণপরিষদে একটি আবেগময় ভাষণ প্রদান করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেছিলেন, এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত। এই সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন হওয়ার পর থেকে গত ৪৮ বছরে এ পর্যন্ত ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এ সময়ে বসা ১০টি সংসদের মধ্যে সপ্তম সংসদ বাদে প্রতিটি সংসদেই সংবিধান সংশোধন হয়েছে।