১৯ নভেম্বর ২০২০, আজকের মেঘনা. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ
স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে প্রতিটি মানুষেরই চাই ভালো টয়লেট। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, টয়লেটকে এড়িয়ে চলার কোনো সুযোগ কারোরই নেই। এ ছাড়া এখন করোনাকাল চলছে, এ সময়ে টয়লেট ব্যবহারে খুবই সতর্ক হতে হবে।
বিশ্ব টয়লেট দিবস আজ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘Sustainable sanitation and climate change’। টেকসই পয়ঃনিষ্কাশন প্রতিটি মানুষের জন্যই অপরিহার্য। সুস্বাস্থ্যের জন্য বাড়িতে ও কর্মস্থলে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ টয়লেট ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। টয়লেট অপর্যাপ্ততার কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ বিভিন্নরকম স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগছে।
শতভাগ টয়লেট সুবিধা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি মাথায় রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালন করে থাকে। বাংলাদেশেও আজ দিবসটি পালিত হচ্ছে। টয়লেটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বেশি। বিশেষ করে ভারতে যেখানে প্রায় ৭০ কোটি মানুষের টয়লেট নেই সেখানে বাংলাদেশের প্রায় সব বাড়িতেই টয়লেট রয়েছে। দেশের স্যানিটেশন কার্যক্রমকে শতভাগ সফলের দাবি নিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।
টয়লেট মানেই সেখানে জীবাণুর কারখানা। তাই টয়লেট পরিচ্ছন্নভাবে ব্যবহার করা খুবই জরুরি। টয়লেট ব্যবহারের পর টিস্যু ব্যবহার করুন। অ্যান্টিসেপটিক সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন। টিস্যু ব্যবহারের পর নির্ধারিত ঝুড়ি বা বাস্কেটে ফেলুন। কমোড হলে বসার জায়গা ভালো করে দেখে নিন। টয়লেট ব্যবহার করার পর ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে কোনোভাবেই ভুলবেন না। মেয়েদের ক্ষেত্রে স্যানিটারি ন্যাপকিন কখনো ফ্ল্যাশ করা ঠিক নয়। নোংরা ন্যাপকিন ডাস্টবিনে ফেলুন। এ ছাড়া টয়লেটে কমোড না থাকলে বসার আগে খানিকটা পানি ঢেলে দিয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে।
জাতিসংঘের এক হিসাবে, বিশ্বে সাতশ’ কোটি মানুষের মধ্যে আড়াইশ’ কোটি মানুষের উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। একশ কোটি মানুষ খোলা জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ করেন।
২০০১ সালে বিশ্বে টয়লেট ব্যবহার ও স্যানিটাইজেশন সম্পর্কে ক্যাম্পেইন শুরু করে ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউটিও)। এরপর থেকে প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব টয়লেট দিবস। ডাব্লিউটিও’র সর্বশেষ তথ্যমতে, বিশ্বে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষ বর্তমানে সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বের ৪০ ভাগ মানুষ স্যানিটেশন সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে।
ঢাকা মহানগরে পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের দাবি অনেক দিনের। কিন্তু সে দাবি তেমনভাবে আমলে নিতে দেখা যাচ্ছেনা সংশ্লিষ্টদের। অন্যদিকে দেখা যায়, বেশীরভাগ পাবলিক টয়লেটের অবস্থাই করুণ। কোনটির দরজা নেই, ছিটকিনি নেই, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নেই, বিদ্যুৎ নেই। অপরিস্কার, ময়লা, দুর্গন্ধ, ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে, ময়লা পানি জমে থাকে, নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এমন চিত্র হাসপাতালগুলোতেও।
আবার নাগরিক সভ্যতায় প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন অত্যাধুনিক ঝা চকচকে শপিং মল, বিনোদন কেন্দ্র, মসজিদ, স্কুল, কলেজ, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি। কিন্তু এ শহরে পাবলিক টয়লেটের যেন কোন প্রয়োজনই নেই। যাও বা কিছু আছে, সেগুলোও ব্যবহার উপযোগী নয়। নারীদের জন্য এসব টয়লেট তো রীতিমত বিভীষিকাময়।
গত বছর ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের বিশ্ব টয়লেট দিবসের অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, বিদ্যালয়গামী ছাত্র-ছাত্রীরা দিনে প্রায় ৬/৭ ঘণ্টা বিদ্যালয়ে অবস্থান করে। বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য পৃথক ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নির্মাণের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কাজ করছে। ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সব বিদ্যালয়ে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য পৃথক ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নিশ্চিত করা হবে। এবারের বিশ্ব টয়লেট দিবসে মাননীয় মন্ত্রীকে আমরা আরেকবার কথাটি মনে করিয়ে দিতে চাই।