কুমিল্লা মেঘনায় নারীকে রিসোর্টে যাওয়ার কু-প্রস্তাবের অভিযোগে মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমিউদ্দিন (৫০) ও উপ-পরিদর্শক (এস আই) মো. মোশাররফ হোসেন (৩৫)-এর বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেন মেঘনা থানাধীন শিকিরগাও গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার মেয়ে রুমানা রহমান জয়া (২৬) নামে এক নারী। গত ৪ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ মামলাটি করা হয় । আদালতের বিচারক মোয়াজ্জেম হোসেন কুমিল্লা সহকারী পুলিশ সুপার দাউদকান্দি সার্কেল মোঃ ফয়েজ ইকবালকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘ একমাস অভিযোগের তদন্ত শেষে ৩৩ পাতার একটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ এনে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন জয়া, তদন্তে নারীর আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে
কুমিল্লা সহকারী পুলিশ সুপার দাউদকান্দি সার্কেল মোঃ ফয়েজ ইকবাল এর তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে, রুমানা রহমান যে অভিযোগ করেছিলেন তা সত্য নয়। সার্বিক তদন্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণে অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি। রুমানা রহমান উদ্দেশ্যে প্রনোদিত ভাবে পুলিশ সদস্যদেরকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। তিনি বলেছেন ওসি ও এসআই ওনার হোয়াটস্অ্যাপ ও মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিয়েছেন কিন্তু সিডিয়ারে তার সত্যতা প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং ওসি ওয়ারেন্টের আসামি ধরতে যাননি, এসআই মোশারফ গিয়েছিলেন ওয়ারেন্টের কাগজ দেখানোর পর রুমানা রহমান ওয়ারেন্টের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেন তার প্রমাণ আমার তদন্ত রিপোর্টের সিডি কপিতে আছে, রুমানা রহমানকে ওসির রুমে একা কখনো নেওয়া হয়নি তার প্রমান সিসিটিভি ফুটেজ ও সাক্ষীগন নিশ্চিত করেছেন, তদন্তের স্বার্থে রুমানা রহমানের মোবাইল ফোনটি চাইলে তিনি এড়িয়ে গেছেন, রুমানা রহমান জয়া সরকারি কর্মচারীর আইনানোগ ও কাজে বাধা দেওয়া মামলার দায় হতে বাঁচার জন্য স্ানীয় কিছু লোকের প্ররোচনায় আক্রোশবশত বিজ্ঞ আদালতে সূত্রোক্ত মিথ্যা দরখাস্ত দায়ের করেন, আমার সার্বিক তদন্তে ঘটনার সংক্রান্তে জ্ঞাত জিজ্ঞাসিত সাক্ষীদের জবানবন্দী, মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ও সিডিআর পর্যালোচনায় রুমানা রহমান এর দায়েরকৃত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায় মেঘনা থানার শিকিরগাঁও এলাকার প্রবাসী মাহমুদুল হাসানের স্ত্রী রুমানা রহমান জয়া (২৬) তাদের পারিবারিক ও আত্মীয়স্বজনের জায়গা জমির বিরোধ নিয়ে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েকবার থানায় আসা-যাওয়া করে। তাই ওসি ছমি উদ্দিন ও এস আই মোশাররফ তাকে প্রায়ই ফোন করতো। একপর্যায়ে ওসি তাকে মেঘনা রিসোর্টে সময় কাটাতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। এবং এসআই প্রায়ই ফোন করে তাকে অশোভন প্রস্তাব দিতো। তারা রুমানার নম্বরে এবং হোয়াটস্অ্যাপ নম্বরে ফোন দিতো। তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় দুজনেই রুমানার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। গত ২৬শে আগস্ট এক ঘটনাক্রমে রুমানার বোনের জামাইকে গ্রেপ্তার করতে যায় ওসমিোঃ ছমিউদ্দিন ও এস আই মোশাররফ। সেদিন রুমানা মামলার ওয়ারেন্ট চাওয়াতে এসআই মোশাররফ রুমানাকে টেনে হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যায়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসআই মোশাররফ পুলিশদের সহায়তায় টেনে হিঁচড়ে রুমানাকে ওসির রুমে নিয়ে যায় এবং রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। এ সময় ওসি তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন এবং রুমানা চিৎকার করলে তাকে মেরে ফেলার ও রেপ করার হুমকি দেন। এ সময় তিনি রুমানার মুখ চেপে ধরে শরীরের স্পর্শকাতর স্ানে হাত দেয়। তখন ওসিকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তিনি তাকে চড়, থাপ্পড় এবং লাথি মারতে থাকে। সে চিৎকার শুরু করলে এসআই মোশাররফ এসে তার গলা চেপে ধরে যাতে সে চিৎকার করতে না পারে। এ সময় মোশাররফ তাকে যৌন নির্যাতন করার হুমকি দেয়। তখন ওসি বলে, ‘আমার কথাতো শুনলি না, এখন তোর রস বাহির করমু।’ পরে ২৭শে আগস্ট সকালে ওসি ও এসআই আবার তাকে প্রস্তাব দেয়- তাদের প্রস্তাবে রাজি হলে তাকে ছেড়ে দেবে। এতেও তিনি রাজি হননি। পরে তারা রুমানার হাতের মোবাইল সেটটির লক খুলে সব তথ্য মুছে দেয়। যাতে পূর্বে তার সঙ্গে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ না থাকে। এবং তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলে একটি মামলা করে কোর্টে চালান করে দেয়। পরে ৮দিন জেলে থাকার পর তিনি জামিনে এসে মামলাটি করেন।