৫ মে,২০২১,আজকের মেঘনা ডটকম, এম এইচ বিপ্লব সিকদার : অদৃশ্য একটি ভাইরাস কোভি-১৯ সারা বিশ্বকে থমকে দিয়েছে। কোন দোহাই মানছেন না এই ভাইরাস। মোকাবিলায় সচেতনতা ছাড়া তেমন কোন পদ্ধতি এখনো পুরোপুরি ব্যবস্থা করতে পারেনি বিশ্ব। টিকার ব্যবহার শুরু হলেও সব দেশে পাওয়া এখনো পর্যন্ত অনিশ্চিত। ২০১৯ সালের শেষের দিকে এই অদৃশ্য ভাইরাসের রোগী চিনের উহান প্রদেশে শনাক্ত হয়। সেই থেকে শুরু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরা ভাইরাসের মোকাবিলায় যুদ্ধ। ধনী গড়িব, হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান, কাউকে ছাড় দিচ্ছেনা। বিশ্ব জোরে মৃত্যুর মিছিল। স্বজনদের আর্তনাদে ভারী হয়ে আসছে আকাশ বাতাস। জীবন ও জীবীকা আজ গ্যাড়াকলে। একটি সাধারণ ভাইরাস আমাদের সবার জীবনকে একেবারে থমকে দিয়েছে। আমরা এর আগেও এরকম ভাইরাসের হুমকিতে পড়েছি। মহামারিরও মুখোমুখি হয়েছি।
কিন্তু প্রতিটি নতুন সংক্রমণ বা মৌসুমী ফ্লুর জন্য এর আগে কখনো বিশ্বে সবকিছু এভাবে বন্ধ হয়ে যায়নি। বাংলাদেশ ও এই ভাইরাস যুদ্ধের মোকাবিলা করছে বিভিন্ন ভাবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে অন্যসব চললেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা, এসাইনমেন্ট, এগুলো যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত। একজন শিক্ষকের সাথে কথা বলছিলাম তিনি ক্ষুব্ধ ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তার মতে আর ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক স্বরূপ চিন্তা -শিক্ষাই নাই।
একটি শিশু পিতামাতার হাত ধরেই পৃথিবীতে আসে, আলোর মুখ দেখে। পিতামাতাই শিশুটির জন্মদাতা, তবে বৈচিত্র্যময় পৃথিবী সম্পর্কে বুঝতে শেখে শিক্ষকদের কাছে। শিক্ষকই জ্ঞানশূন্য মানব শিশুকে ভিন্ন চোখে বিশ্ব দেখতে শেখায়, প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পৃথিবীজুড়ে যে সংখ্যক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে তার এক ভাগও জেলখানা নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তার পুত্রের শিক্ষকের কাছে লেখা পত্রে বলেছিলেন, ‘আমার পুত্রকে জ্ঞানার্জনের জন্য আপনার কাছে পাঠালাম। তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন- এটাই আপনার কাছে আমার বিশেষ দাবি।
পিতামাতা-সন্তানের সম্পর্কের মতো ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক এক অবিচ্ছেদ্য অনিন্দ্য সুন্দর সম্পর্ক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক হওয়া উচিত অভিভাবকতুল্য ও বন্ধুসুলভ। শিক্ষকরা প্রথমে হবেন অভিভাবক, তারপর বন্ধু। অভিভাবক ও বন্ধুত্বের একটি মিশ্রণ থাকবে শিক্ষকের আচরণের মাঝে। আসলে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক একটি চমৎকার পরিপূরক সম্পর্ক। শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক হতে হবে পাত্র ও পানির মতো। পাত্র ছাড়া যেমন পানি সংরক্ষণ সম্ভব নয়, তেমনি শিক্ষক-ছাত্র সুসম্পর্ক ছাড়া জ্ঞানার্জন বিতরণও অসম্ভব। একজন শিক্ষকই শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জনের পেছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জোগায়, স্বপ্ন দেখায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে মাসের পর মাস বছরের পর বছর ছাত্র শিক্ষকের যে দীর্ঘ গ্যাপ তৈরি হয়েছে এতে সম্পর্কের অবস্থা প্রায় বিলুপ্তির পথে। অনেক ছাত্র লেখা পড়া ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অভিভাবকদের বিষন্নতা। বাসায় রেখে অনলাইন গেমস আসক্তি, বড় একটি প্রজন্ম ভূল পথে হাটছে। আবার পদ পদবী, নেতৃত্বের লালসার শিকার হয়ে ভালো ভালো মেধাবী শিক্ষার্থীরা অশুভ রাজনৈতিক শিষ্টাচারের গ্যাড়াকলে পরে পিতামাতার স্বপ্ন, অর্থ সব বিলীন করে দিচ্ছে। কয়েকটি প্রজন্ম আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একজন শিক্ষার্থীকে লেখা পড়ারা লাইনে রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা শিক্ষকের।
ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক হাজার বছর ধরে চলে আসছে। শুধু শিক্ষা কিংবা জ্ঞানার্জন নয়, একজন ছাত্রের বিপদ-আপদ-দুর্দিনে ছায়ার মতো পাশে দাঁড়ান একজন শিক্ষক। আবার সেই শিক্ষার্থী জীবনে যত বড়ই হোক- গুরুজনকে ভক্তিভরে সম্মান করেন, শ্রদ্ধা করেন। আমাদের সংস্কৃতিতে শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে রয়েছে এক আশ্চর্য সেতুবন্ধন। যে বন্ধন কেবল পারস্পরিক স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠে। ছাত্র-শিক্ষকের এ সম্পর্ক বড় শক্ত গাঁথুনির সম্পর্ক। এই ভাইরাসের মোকাবিলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড সেই মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যেতে বসেছে। এখনো সময় আছে স্বাস্থ্য বিধি মেনে অন্যসব কিছুর মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া প্রয়োজনে সব বন্ধ থাকবে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে কড়া স্বাস্থ্য বিধি আরোপ করে এবং নির্দেশনা মানতে সকল প্রকার ব্যবস্থা করে ছাত্র শিক্ষকের দূরত্ব থেকে ফিরিয়ে এনে সেতু বন্ধন তৈরির ব্যবস্থা করা। অন্যথায় ‘ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক স্বরূপ বিলুপ্তির পথে ‘ই শেষ নয় শিক্ষাই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। শেষ হয়ে যাবে জাতি। লেখক -সাংবাদিক