২৮ জুন ২০২২ইং, আজকের মেঘনা ডটকম,
রিশাত জাহান রেশমা।।
শিক্ষাজীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ মেস কিংবা হোস্টেল জীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তৃত পরিসরের হল কিংবা ক্যান্টিন সুবিধা সবাই পায় না। তাদের উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য থাকতে হয় মেসে কিংবা হোস্টেলে, নিজ খরচে। হল ক্যান্টিনের মতো সাবসিডি সেখানে থাকে না। অনেক অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের সেখানে ভিন্ন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য এই অবস্থাটা আরো স্পর্শকাতর। বাধা বিঘ্ন না পেরিয়ে বড় হয়েছে কে কবে। সান্ত্বনা এটাই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী মিলে থাকি রাজশাহীর এক ছাত্রী মেসে। মেসে খাবারের মান ভালো ছিল না। তাই কিছুটা অস্বস্তি ছিল। কিন্তু একা চাইলেইতো আর খাদ্যমান ভালো করা যায় না। মায়ের হাতে রান্না খেয়ে অভ্যস্ত হওয়ার পর হঠাৎ মেসের রান্না কারো ভালো লাগার কথা নয়। এছাড়া মেসের কিছু ধরাবাধা নিয়মতো মেনে চলতেই হতো। মেস মালিকটাও খুব কড়া আর বাণিজ্যিক চিন্তার মানুষ ছিলেন। জীবনের অনিবার্য বাস্তবতাতো মেনে নিতেই হয়। লোকাল বাস কিংবা রিকশায় ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর একটা বিড়ম্বনাতো ছিলই। ওই যে কথায় বলে কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না। ভবিষ্যৎ যেখানে স্বপ্নময় সেখানে ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে পড়ে থাকার সময়ই বা কোথায়। মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে বার্ধক্যে তাদের পাশে দাঁড়াতে মেয়ে হয়ে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। জীবন মানেই সংগ্রাম, বাধা আসবেই প্রতিকূলতা কাটিয়ে লক্ষ্যে যেতে হবে। আয়েশ করে কেউ বড় হতে পারেননি বরং বাবার ধনে পোদ্দারি করে লাইনচ্যুত হওয়ার উদাহরণ আছে অহরহ । মেয়ে বলে কত বাধা এই সমাজে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না অনাকাঙ্ক্ষিত কত ঘটনা হজম করতে শিখেছি। মানিয়ে নিয়েছি কারন যে পথে কাটা নেই সেটা পথ না, সফলতা অর্জনের জন্য এ যুদ্ধটা করতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে মাকে কয়েকটি ধমক দিতাম কারণ ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে যেত আর এখন ঘড়ির এলার্ণ দিয়ে রাখি যদি দেরি হয়ে যায় ক্লাস, প্রাইভেট মিস হয়ে যাবে। বুয়া খাবার রেখে গেছে অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে কারন যথা সময়ে রুমে আসতে পারিনি। আর বাসায় খাবার একটু এদিক সেদিক হলেই মাকে বকাঝকা দিতাম। অনেকের ইচ্ছে শিক্ষা শেষে পাবলিক সার্ভিসে যোগ দেবেন। একজন নারী হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। বহু নারীর স্বাবলম্বিতা না থাকার কারণে সমাজে তাদের মর্যাদার আসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কর্মজীবনে তিনি নারী উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। মেসের ভাড়া নিয়মিত পরিশোধ করলেও ম্যানেজারের খবরদারি যেন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়। এমনিতেই ভাড়া একটু বেশি তবুও মাঝেই মাঝেই ভাড়া বাড়িয়ে দেন বাড়িওয়ালার দোহাই দিয়ে। একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে যা বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিবার থেকে পড়াশোনার খরচ দিলেও তাকে টিউশনি করতে হয়। বাড়তি ভাড়া গুণতে হিমশিম খেতে হয় অনেকেই। এর কোনো নীতিমালা নেই। ভাগ্য বলে কথা। দেখার কেউ নেই জেনেই থাকি। ফলে বহু শিক্ষার্থী এভাবে মধ্যস্বত্বভোগী মুনাফাখোরের অন্যায় অত্যাচারের শিকার হন। একজন নারী শিক্ষার্থীর নিজস্বতা থাকতে হবে। নিজেকে গুটিয়ে রাখলে হবে না। তাকে সব ক্ষেত্রে যোগ্য মনে করতে হবে। এই কাজটি ছেলেরা করবে কিংবা এই কাজটি মেয়েরা করবে বিষয়টি এমন না। সাহস, বুদ্ধিমত্তা আর মেধা দিয়ে তাকে সব কিছু জয় করতে হবে। পিছিয়ে থাকলে হবে না। কোনো দায়িত্ব থেকে পিছপা হওয়া যাবেনা কু সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হলে এভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে হয়তোবা এই প্রতিকূলতাই আমাকে আমার মর্যাদার আসনে নিয়ে যাবে তাও যদি না হয় কেউ না কেউ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা লাভ করবে,। মেয়েরা তার অধিকার সচেতন হবে। তাহলে সমাজে নারীর একটা মর্যাদাকর অবস্থান তৈরি হবে এই তো ভাবনা। বান্ধবী ঐশি সহ অন্যরা মনে করেন, নারীর জন্য অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও কর্ম পরিবেশ সেভাবে গড়ে ওঠেনি। পত্রিকান্তরে বিভিন্ন সময়ে আমরা বেদনাদায়ক সংবাদ পাই ভুক্তভোগী নারীকে ঘিরে। যে নারী সমাজের অর্ধেক তারা মর্যাদা আর শান্তির জায়গায় না থাকলে একটা দেশ একটা সমাজ সভ্য হতে পারে না।একা মেসে আমি না থাকলে আমার স্বকীয়তা হেড়ে যাবেনা? পুরুষকে তার দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাতে হবে। নারীকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।
লেখক – শিক্ষানবিশ সাংবাদিক, শিক্ষার্থী